ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

নারীকে নিয়ে ট্রাম্পের যত নোংরামি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬
নারীকে নিয়ে ট্রাম্পের যত নোংরামি!

ফক্স নিউজের মেগিন কেলির ওপর ক্ষেপে গিয়ে ট্রাম্প সেবার বললেন, ওরতো যেকোনও জায়গা থেকে রক্ত ঝরে। মেয়েদের রক্ত ঝরা নিয়ে অত্যন্ত বাজে ইঙ্গিত করলেন তিনি।

এমনকি কেলিকে ‘বিম্বো’ বলতেও ছাড়লেন না। জিওপি’র একটি বিতর্কে সঞ্চালক ছিলেন মেগিন কেলি। ট্রাম্পের কাছে এক প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন কেন তিনি মেয়েদের ‘মোটা শুকরী আর কুত্তি’ বলেছিলেন। আর তাতেই ট্রাম্পের অমন নোংরা ভাষার ব্যবহার।

রিপাবলিকান দলের প্রার্থীতায় ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কার্লি ফিওরিনা। তার সম্পর্কে ট্রাম্পের মত, ওঁর চেহারার জন্যই তো কেউ ভোট দেবে না। রোলিং স্টোনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ওর চেহারার দিকে তাকান!, কেউ কি তাকে ভোট দেবে? আপনি কি ভাবতেও পারেন এমন একটা চেহারার মানুষ আমাদের ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট?’ এরপর অবশ্য ভোল পাল্টালেন ট্রাম্প। ‘না, আসলে আমি তার চেহারা নয়, ব্যক্তিত্বের কথাই বলতে চাইছি। ’

একই ধরনের মন্তব্য তিনি হিলারি ক্লিনটনকে নিয়েও করেছেন। তার চেহারায় কোনও ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লুক’ নেই বলেই মন্তব্য ডনাল্ড ট্রাম্পের।

গত ডিসেম্বরে হিলারি ক্লিনটনের বাথরুমে যাওয়া নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেবার ডেমোক্রেটিক একটি বিতর্কে হিলারির মঞ্চে যেতে কিছুটা দেরি হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি সে কোথায় গেছে। বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ” এই বলে বাথরুমের ইঙ্গিত করলেন ট্রাম্প। নারীদের যে মাঝে মধ্যে বাথরুমে যেতে হয় সে নিয়ে ট্রাম্প যে এই প্রথম ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বললেন তাই নয়। ২০০৪ সালে হাওয়ার্ড স্টার্নের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একটি উদাহরণও নেই তিনি মেলিনা ট্রাম্পকে কখনো বাথরুমে হাগা করতে যেতে দেখেছেন।

হিলারিকে নিয়ে সবচেয়ে বাজে ইঙ্গিত তিনি করেছেন বারাক ওবামাকে জড়িয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার লড়াইয়ে ওবামা ও হিলারি দুজনই ছিলেন। পরে হিলারি সরে দাঁড়ান। আর তা নিয়েই ট্রাম্পের মন্তব্য, সেবারতো বারাক ওবামা তাকে শলং করেছিলেন। এটি ইংরেজিতে একটি নোংরা শব্দ যার অর্থ পুরুষাঙ্গ।      

নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ট্রাম্প বলেন, যে নারীরা গর্ভপাত করায় তাদের সাজা দেওয়া উচিত। এমএসএনবিসি’র ক্রিস ম্যাথিউসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, গর্ভপাতের জন্য সাজার ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমেরিকা যদি কখনও গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে তখন এমন ঘটনা ঘটালে  তার সাজা ভোগ করতে হবে নারীদেরই। তবে পরক্ষণে কথা ঘুরিয়ে বললেন, যারা গর্ভপাত করবে তাদেরও সাজা পেতে হবে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিজের এমন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

অনেকেই মনে করেন হিলারি ক্লিনটনের হাতে অনেক কার্ডই রয়েছে যা তিনি খেলতে পারবেন ভোটারদের কাছে টানতে। কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন আর কোনও কার্ডই নয়, হিলারির  হাতে একমাত্র ‘নারী কার্ড’ই রয়েছে।

সেবার ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কনভেনশনে পাকিস্তানি আমেরিকান খিজির খান বক্তৃতা করে ট্রাম্প তার দেশের জন্য কোনও আত্মত্যাগই করেননি এমন বক্তৃতা দেওয়ার পর ডনাল্ড ট্রাম্প আক্রমন করে বসলেন খিজির খানের স্ত্রী গাজালা খানের ওপর। এবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সম্ভবত গাজালাকে কোনও কথাই বলতে দেওয়া হয়নি। কারণ সব মুসলমান নারীরই বাক স্বাধীনতা থাকে না, তারা স্রেফ তাদের স্বামীদের অধস্তন হয়ে থাকে।   তবে সে নিয়ে পরে মুখ খোলেন গাজালা খান নিজেই। তিনি বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই জানতে চান, কেনো আমি কথা বলিনি তাহলে জানাচ্ছি, সে সময় মঞ্চের পেছনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা আমার হারানো সন্তানের মুখটি আমাকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিলো। এটা স্রেফ এক মায়ের অনুভূতি।

মেয়েরা কর্মস্থলে যৌন নিপীঁড়নের শিকার হলে তার জন্যও মেয়েদেরই বের করে দেওয়ার পক্ষে ডনাল্ড ট্রাম্প। তা যদি তার নিজের মেয়েও হন, তাহলেও। ইউএসএ টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার মেয়েটি যদি কখনো কাজে গিয়ে যৌন নিপীঁড়নের শিকার হয়, তাহলে আমি আশা করবো সে নিজেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে। আমি চাইবো সে নতুন একটি কাজ খুঁজে নেবে, কিংবা নতুন কোনও ক্যারিয়ার।

কেবল তাই নয়, এক বক্তৃতায় তিনি যৌন নিপীঁড়কের পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। ফক্স নিউজের সিইও রজার এইলসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত। তাকেই ডিফেন্ড করে ট্রাম্প বলেন, রজার এইলস অনেক নারীকে অনেক সহযোগিতাও করেছেন। আমি জানি এই মেয়েদের তিনি কতটা সাহায্য করেছেন।

হিলারি ক্লিনটনের মাথা কাজ করে না বলেও একবার মন্তব্য করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। গত গ্রীস্মে এক জনসভায় ট্রাম্প বলেন, হিলারি একটি অস্বাস্থ্যকর আগুন। তার মস্তিষ্কের শর্ট-সার্কিট হয়ে গেছে। তার সমস্যা হচ্ছে। মেয়েদের ক্রেজি আর শারীরিকভাবে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য অযোগ্য বলেই মনে করেন ট্রাম্প।

সামরিক বাহিনীকে নারী ও পুরুষদের একসঙ্গে রাখলে যৌন নিপীঁড়ণ হবেই বলে মনে করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৩ সালে তখনও প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী হবে বলে জানাননি ট্রাম্প। তখনই একটি টুইটে তিনি লিখেছিলেন, সামরিক বাহিনীতে নারীদের যৌন নিপীঁড়ণ প্রত্যাশিত। সেখানে নারী আর পুরুষ একসঙ্গে কাজ করে। পরে এনবিসি’র ম্যাট লয়ের এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাম্প আবারও বলেন, ওই টুইটে কোনও ভুল ছিলো না।

হাওয়ার্ড স্টার্নের একটি শোতে গিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, নারীদের যোগ্যতার মাপকাঠি মূলত তাদের চেহারা আর বিছানায় তাদের পারঙ্গমতা দিয়েই বিচার হয়। পরে সে নিয়ে প্রশ্ন হলে তিনি বলেন, ওখানে তো আমরা মজা করতে গিয়েছিলাম, আর সেখানে যে কোনও কথাই চলতে পারে।  

নারীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় অবমাননা হিসেবে ধরা হয় তার আরেকটি বক্তৃতাকে। গত মার্চে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “নারীদের ব্যাপারে আমি ভালো ভূমিকা রাখবো নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমার ভালো ভূমিকাই থাকবে। ”

আর নিজের মেয়েকে নিয়ে মন্তব্য করে ট্রাম্প তার আসল চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে মেয়ে সম্পর্কে বলেছেন, ইভাঙ্কা যদি তার মেয়ে না হতেন তাহলে তিনি তার সঙ্গে ডেট করতেন।  

বাংলাদেশ সময় ১১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।