কাকিনা (লালমনিরহাট) ঘুরে: চিহ্ন বলতে হাওয়াখানাই আছে। সামনের নারকেল তলায় যে স্থাপনায় শ্যাওলা পড়ে আছে, সেটি দেবে যাওয়ায় কিছুই বোঝার উপায় নেই যে এটিও ছিলো জমিদারের ‘গোপন আস্তানা’।
বিলাসিতার জন্য সুউচ্চ চারতলা হাওয়াখানা নিমার্ণ করেন তৎকালীন কাকিনা পরগনার জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জন রায় চৌধুরী, সেখান থেকেই সচক্ষে দেখতেন রাজ্যের হাল-চাল।
কালের পরিক্রমায় সেই রাজা নেই, বিলুপ্তি ঘটেছে জমিদারির, হারিয়ে যাচ্ছে জমিদারের বসবাসের ঘর-বাড়িও।
তবুও লালচে ইটের শ্যাওলা পড়া দেয়ালে বটের শেকড় কিংবা আগাছা দেখে থমকে দাঁড়ান কোনো পথিক-উৎসুক মানুষ।
হাওয়াখানা সংলগ্ন জায়গায় সাইকেল স্ট্যান্ড করে আড্ডার ফাঁকেই হয়তো কোনো শিক্ষার্থী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন ধ্বংস হতে যাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির জন্য।
কথিত আছে, খোলা আকাশের নিচে হাওয়া খাওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ‘হাওয়াখানা’র ওপরে ওঠে বসতেন জমিদাররা।
আর এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে তিস্তা তীরসহ আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেন তারা। সচক্ষে দেখতেন পরগনার হাল-হকিকত।
বর্তমান লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে কোচ রাজ্যের সাক্ষী দিচ্ছে জমিদার বাড়িটি।
বাড়ি বলতে হাওয়াখানা, মিলনায়তন, এর অদূরে জমিদার বাড়ির ওষুধখানা। মিলনায়তনটি এখন ‘মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়’। তবে ভবনের খচিত লিপি থেকে জানা যায়, ১৯০৯ সালে এখানে বাবা মহিমার স্মরণে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল করেন মহেন্দ্র রঞ্জন।
বিশাল এলাকা জুড়ে মূল বাড়ি এখন উত্তর বাংলা কলেজ। রাজবাড়ির জায়গাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কাকিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক পরিত্যক্ত রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স পযর্ন্ত পড়ানো হয় এখানে।
কলেজ সহকারী মিজানুর রহমানের ভাষ্য, দুই-তিন বছর আগেও হাওয়াখানায় ওঠা যেতো। তবে প্রায় একবছর আগে একতলা অর্থাৎ ৫-৬ ফুট দেবে যায়। এরপর সেখানে না উঠতে নোটিশ দেওয়া হয়।
ইতিহাস বলছে, মহারাজা মোদ নারায়নের সময় কোচবিহার রাজ্যের অধীনে ছিলো কাকিনা। আনুমানিক ১৬৮৭ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ঘোড়াঘাটের ফৌজদার এবাদত খাঁ।
সে যুদ্ধে নিজেদের রক্ষার জন্য ফৌজদারের পক্ষ নেন রাজ কর্মচারী রঘু রামের দুই ছেলে রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণ। কিন্তু মোঘলদের এ অভিযানে পরাজিত হয় কোচরা।
এরপর অপসারিত হন কাকিনার তৎকালীন চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী। ওই সময় বাষট্টি পরগনায় রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণকে কাকিনার ‘চৌধুরী’ করা হয়।
এভাবে সৃষ্টি হয় নতুন জমিদারিত্বের। লোকমুখে প্রচলিত, জমিদার মহেন্দ্রের অপরিণামদর্শী ব্যয় ও বিলাসিতার কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েন তিনি।
বকেয়া ও সরকারি রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯২৫ সালে নিলামে ওঠে তার জমিদারি। এক পর্যায়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে কাকিনা ছেড়ে ভারতের দার্জিলিং চলে যান মহেন্দ্র রঞ্জন। সেখানেই ১৯৩৯ সালে মারা যান তিনি।
কাকিনা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়ি। লালমনিরহাট সদর মর্ডান মোড় থেকে অটোরিকশায় কাকিনা গেলে খরচা পড়ে ৩৫ টাকা। সেখান থেকে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলেই মহিমারঞ্জনের বাড়ি।
রেলপথেও লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী রুটে কাকিনা রেলস্টেশন নেমে যাওয়া যায়। এর পাশেই রাস্তার পূর্বে বাংলাসাহিত্যের বিখ্যাত কবি শেখ ফজলুল করিমের বাড়ি।
**গাঁয়ের বধূর মনের কথা মেয়েলী গীত
** ‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’
** দাড়িয়াবান্ধা নেই, বিলুপ্ত বৌচি
** লোকজ সংস্কৃতিতে চলে পানের আপ্যায়ন
** বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা
** বাহে শোন মোর ভাওয়াইয়া গান
** ‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’
** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএ/জেডএস