পঞ্চগড় থেকে: বাঙালির মাটির গান বাউল গান। আধ্যাত্মিক চিন্তাজগতের প্রেম-বিরহ নিয়ে এসব গান রচিত।
লোকজসংস্কৃতির সমৃদ্ধ ধারা বাউল সংগীত নিয়ে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা ও শিল্পী জীবনের কথা তুলে ধরেন মো. শাহজাহান বয়াতি।
পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে বসে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সংগীতের মধ্যে থাকলে আধ্যাত্মিক জগতের মানুষের মধ্যে কোনো অপরাধী চিন্তা ভাবনা আসে না।
বর্তমানে বাঙালির নিজস্ব সংগীত বাউল গানসহ বিভিন্ন লোকজসংস্কৃতির হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাউল শাহজাহান বলেন, আমরা এখন আগের মতো কারও দিকে তাকাতে চাই না। আমরা অনেক লাঞ্ছিত হওয়ার পরও বাউল গানটাকে ধরে রাখছি।
‘শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। এখানে অনেকে আছেন ভালো গান করেন কিন্তু টেলিভিশন রেডিওতে কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ এখানকার থেকে আরও কম মেধাবী শিল্পীও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা শিল্পীদের এমন পরিবেশের মধ্যে আনতে পারছি না। ’
বর্ষা বাদে অন্যান্য ঋতুতে এ গানের আসরের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে অগ্রাহায়ণ মাসে ধান কাটার পর শীতকালে হয় এ গান। তবে বর্তমানে এ আয়োজন কেবল উৎসব কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে।
স্বাধীনতার আগে ও পরের বাউল-পালাগানের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে প্রায় প্রতি বাড়িতেই গানের আসর বসতো। একটা গ্রামের এখানে গান ওখানে গান। এ ধারা একাত্তরের পরও ছিলো।
কিন্তু এখন সে ধারা নেই বললেই চলে। মাসে দু’মাসে দুই থেকে তিনটি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
শৈশবে তরিকতপন্থি বাবার কাছেই গানের হাতেখড়ি সর্ব উত্তরের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ার শাহজাহানের। ব্যক্তি জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি।
জানালেন, শৈশবে স্কুলে পড়ার সময়ও গান করেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। নিজে লাঞ্ছনা শিকারের পরও ঐতিহ্য রক্ষায় ছেলেকে গান শেখাচ্ছেন তিনি।
বাউল শাহজাহান বলেন, বর্তমানে সংগীত আড়াল হচ্ছে বলেই খারাপ পথে চলে যাচ্ছে তরুণরা। সংগীতে থাকলে মানুষের ও দিল দু’টোই ভালো থাকে।
‘দেখেন যারা আধ্যাত্মিক বাউল শিল্পী কিংবা সংগীত জগতের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমাও কিন্তু কম। কারণ তারা নিজের বিচার নিজেই করার চেষ্টা করেন। ভুল করলে সেটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চাই। ’
লোকজ সংস্কৃতির প্রসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে মানুষ শিক্ষিত কম হলেও জ্ঞানী ছিলো। এখন রাজনীতির প্রভাবও আছে।
নতুন প্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরতে তাদের ছোটকাল থেকেই গান শেখানোর সুযোগ করে দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান এই আধ্যাত্মিক শিল্পী।
তার ভাষ্য, ‘আমার যদি সেরকম অর্থসম্পদ থাকতো তাহলে একটা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতাম, যেখানে ছেলে মেয়েদের বাউল গান শিক্ষা দেওয়া হবে। জানার কোনো শেষ নেই। নিজে জেনে আরেকজনকে জানানোটা বাড়াতে হবে। ’
‘এক সময় এ অঞ্চলে অনেক শিল্পী ছিলেন। কিন্তু এখন আমি একাই আছি। কেউ মারা গেছেন। কেউ আর গান করেন না। তাদের অবস্থাও বেশ নাজুক। ’
তিনি বলেন, আমরাও চাই যে গানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো রক্ষা করতে। কেননা এগুলো আমাদের হাজার বছরের সম্পদ। এসব গান সংরক্ষণ করে এগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএ/
**দু’মাসি ভাদ্রে বৃষ্টির খেলা
**স্বপ্নে পাওয়া সত্যপীরের গান
** বিলাসী মহেন্দ্রের সাক্ষী হাওয়াখানা
**গাঁয়ের বধূর মনের কথা মেয়েলী গীত
** ‘নিজ সংস্কৃতি নিয়ে হীনমণ্যতা বিলুপ্তির কারণ’
** দাড়িয়াবান্ধা নেই, বিলুপ্ত বৌচি
** লোকজ সংস্কৃতিতে চলে পানের আপ্যায়ন
** বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা
** বাহে শোন মোর ভাওয়াইয়া গান
** ‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’
** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর