খুলনা: ‘বয়স আমার বেশি না ওরে টুকটুকির মা, খালি চুল কয়ডা পাইহে গেছে বাতাসে ’, ‘এতো গল্প না এই তো সেদিন স্বর্গে গিলাম’ , ‘ধলাডারে দেহায়ে কালাডা দেছে মাইয়ে, তোমরা এট্টু বউডা দেহে যাও,’ ‘আমাগে নয়নের মা চাকরি অরে ঢাহা শহরে’, - এ ধরনের পাঁচ শতাধিক খুলনার আঞ্চলিক গান রচনা করেছেন গুরুপদ গুপ্ত।
গানগুলোর সুরও করেছেন নিজে।
১৯৯০ সালে গুরুপদ গুপ্ত বাংলাদেশ বেতার খুলনায় শিল্পী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বেতারের স্টাফ আর্টিস্ট, দোতারা বাদক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কর্মরত ।
নড়াইল জেলার রামনগর চর গ্রামে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই গুণি শিল্পী। তার বাবার নাম অমৃত লাল গুপ্ত। তিনিও ছিলেন আঞ্চলিক গানের শিল্পী। গুরুপদ গুপ্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ৭/৮ বছর বয়স থেকে গান গাওয়া ও লেখা শুরু করেন।
প্রতিভাবান এই শিল্পী খুলনা মহানগরীর ছোট বয়রার কুণ্ডুপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা।
দীর্ঘদিন আঞ্চলিক গানের লালন-পালনকারী গুরুপদ গুপ্ত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) মুখোমুখি হন বাংলানিউজের। তার জীবনের সৃষ্টি, পাওয়া না পাওয়া, আশা-আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলানিউজ: কখন থেকে গানের শুরু?
গুরুপদ গুপ্ত: ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিলো। বাবা ছিলেন একজন শিল্পী। তার কাছ থেকেই গানের হাতেখড়ি। যখন নড়াইলের গ্রামে থাকতাম তখন অষ্টক গান, রয়ানী, গম্ভীরা, গাজীর গান করতাম। তারপর শুরু হয় আঞ্চলিক গান লেখা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত গান লেখা থেমে নেই।
বাংলানিউজ: এ পর্যন্ত কতোগুলো গান লিখেছেন?
গুরুপদ গুপ্ত: এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক লোকজ ও আঞ্চলিক গান লিখেছি। সেই গানগুলোর সুরও নিজে করেছি। খুলনা বেতারে এসব গান প্রচারিত হচ্ছে।
বাংলানিউজ: এতো গান থাকতে আঞ্চলিক গান কেনো?
গুরুপদ গুপ্ত: খুলনাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য চেতনাকে স্বতন্ত্র আঞ্চলিক ভাষায় তুলে ধরতে আঞ্চলিক গান লেখা। এছাড়া আঞ্চলিক গানে একটি বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় ওই অঞ্চলের মানুষ, জীবনধারা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মানব সম্পর্ক, প্রেম-বিরহ, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রূপায়িত করা যায়। যা সহজে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বাংলানিউজ: কখন কষ্ট বা দুঃখ পান?
গুরুপদ গুপ্ত: যখন কেউ গানের বিকৃতি ঘটায়। আঞ্চলিক গানের দু-একটি শব্দ পরিবর্তন করে ও সুর বিকৃত করে পরিবেশন করেন। কেউ কেউ এভাবে শব্দ ও সুর পাল্টিয়ে বা বিকৃত করেই ক্ষান্ত থাকেন না, এ গানের গীতিকার সুরকার ও শিল্পীর কথা জানা থাকা সত্ত্বেও, ‘সংগৃহীত’ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। আবার কেউ কেউ আঞ্চলিক গানকে ব্যান্ডের সুরে পরিবেশন করেন। ইদানিং আমার গানও অনুমতি ছাড়া বিকৃত করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে- গানের রেওয়াজ করি বলে কোনো ভালো বাসা ভাড়া দিতে চান না বাড়িওয়ালারা।