শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) কাজীপুরের মেঘাই খেয়াঘাটের ল্যান্ডিং স্টেশনে বসে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় যমুনা নদীর মাঝি নূর মোহাম্মদ এভাবেই শুরু করেন তার গল্প।
তিনি বলেন, ঝড় শুরু হলে নৌকার যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়।
একাধিকবার যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে কাজীপুর সদর ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া এলাকায় এসে বসতভিটা গড়ে তোলেন নৌকা মালিক নূর মোহাম্মদ। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ছেলে সোহেল রানা স্থানীয় একটি কলেজে পড়েন। আর এইচএসসি পাশ করা দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
একান্ত আলাপচারিতায় নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে তিনি মেশিনারি পার্টসের ব্যবসা করতেন। কিন্তু এ থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলছিলো না। এ কারণে প্রায় লাখ টাকা ব্যয় করে একটি নৌকা বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। বৈঠা হাতে নেমে পড়েন হিংস্র যমুনায়।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যমুনায় নৌকা বেয়ে যাত্রী পারাপার করতে শুরু করেন। ওইসময় সব খরচ বাদে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় থাকতো। এভাবে ব্যবসায়ী থেকে নৌকার মাঝি হয়ে নূর মোহাম্মদের পথ চলা শুরু।
সময়ের ব্যবধানে নৌকার সংখ্যা বাড়তে থাকে। পাল্লা দিয়ে আয় কমতে থাকে নূর মোহাম্মদের। কিন্তু যমুনাকে ছাড়তে পারেননি তিনি। ছাড়তে পারেননি তার প্রিয় নৌকা আর পেশাকে। আজও একই পেশায় যুক্ত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ মাঝি।
ঘুম ভাঙলেই বাড়িতে আর মন বসে না নূর মোহাম্মদের। আগের মতোই ভোর বেলায় মেঘাই খেয়াঘাটে চলে আসেন তিনি। চেইন মাস্টারের ডাক পড়লেই নৌকার হাল ধরে চালকের আসনে শুরু হয় তার কর্মব্যস্ততা। যাত্রী ওঠার পর যমুনার বুক চিরে ছুটে চলেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-তুফান সবকিছু মাড়িয়ে নৌকা বোঝাই যাত্রী নিয়ে নদীর এপার থেকে অপর পারে চলতে থাকে তার জীবন সংগ্রাম।
নূর মোহাম্মদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় উপস্থিত ছিলেন কলিমউদ্দিন, সোলেমান, ওয়াহেদুল, আমিনুর, সেলিমসহ আরও কয়েকজন নৌকার মালিক ও মাঝি। তারাও একসময় বলতে শুরু করেন হিংস্র যমুনার বুকে তাদের জীবন সংগ্রামের গল্প। নূর মোহাম্মদের মতো তাদের অভিজ্ঞতাও বৈচিত্রময়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এমবিএইচ/এনএইচটি