ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

অন্যান্য

স্বপ্নপূরণের সাথী হওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৬, জুলাই ১৪, ২০২৫
স্বপ্নপূরণের সাথী হওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা

দিনটা ছিল ২০০৮ সালের ২৫ জুন। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম খানপুরে হাবিবুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির ঘরে হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয় এক কন্যাশিশু।

বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই চোখে অন্ধকার দেখেন। কী হবে এ কন্যার ভবিষ্যৎ? চিন্তায় অস্থির সবাই। সৃষ্টিকর্তা যা দিয়েছেন, তা তো আর ফেলে দেওয়া যাবে না। যত কষ্টই হোক, এই মেয়েকেই মানুষ করবেন তারা। দৃঢ় সংকল্প করেন হাবিবুর রহমান ও জাহানারা খাতুন। শিশুর নাম রাখেন লিতুনজিরা। একটু বড় হলে ভর্তি করেন বাড়ির পাশের মক্তবে। মক্তবে প্রথম পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করে লিতুনজিরা। নতুন আশায় বুক বাঁধেন বাবা-মা। মক্তব ছেড়ে বাড়ির পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান মেয়েকে। এখানেও অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করে লিতুন জিরা। প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম হতে থাকে। ২০১৯ সালে পিইসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

প্রাইমারি স্কুল থেকে এবার ভর্তি করা হয় বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এখানেও যথারীতি সব ক্লাসে সবাইকে টপকে প্রথম হতে থাকে সে। সবশেষ এবারের এসএসসিতে প্রত্যেকটি বিষয়ে ৯০+ নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করে। বাবা-মায়ের সহযোগিতায় লিতুনজিরা স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারলেও আরও কয়েক দফা বিভিন্ন শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়া সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়েই বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক রাখতে হতো। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে এত খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। ২০১৯ সালের পিইসিতে লিতুনজিরা যে অদম্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে, গণমাধ্যম থেকে তা জানার পর লিতুনজিরার স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের ডিজিএম রেদোয়ানুর রহমান লিতুনজিরার বাড়িতে গিয়ে তার বাবার হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। লিতুনজিরা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। লিতুনজিরার বাবা হাবিবুর রহমান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘চলাচলের সমস্যার কারণে লিতুনজিরার জন্য ৩-৪ জন প্রাইভেট শিক্ষক রাখতে হয়। আমি একটা কলেজে শিক্ষকতা করি। কিন্তু কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় গত ২০ বছর ধরে বেতন পাই না। ’ তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে পাওয়া ৫ লাখ টাকার পুরোটাই পোস্টঅফিসে সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। সেখান থেকে প্রতি মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা পাওয়া যায়। লিতুনজিরার পড়াশোনার খরচের একটা বড় অংশই এখান থেকে হয়ে যায়। ’ তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা সে সময় এভাবে এগিয়ে না এলে লিতুনজিরার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া অনেকটাই দুরূহ হয়ে উঠত’।

লিতুনজিরাও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই বসুন্ধরার খাতায় লেখালেখি করেছি। এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে আগে থেকেই চিনতাম। সেই বসুন্ধরা গ্রুপ আমার স্বপ্ন পূরণের সাথী হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছি। সেই টাকা পোস্ট অফিসে রেখে গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে পাচ্ছি। যা আমার পড়াশোনার খরচ অনেকটাই মিটিয়েছে’। লিতুনজিরার মা জাহানারা খাতুন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এইচএসসিতে ভর্তি করার পর লিতুনজিরার জন্য খরচ কয়েক গুণ বাড়বে। সামান্য কিছু কৃষি জমিই আমাদের ভরসা। এখন এই বাড়তি খরচ কীভাবে আসবে, তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ’

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।