ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ঋণের টাকার বোরো ক্ষেতে নোনা পানি 

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
ঋণের টাকার বোরো ক্ষেতে নোনা পানি 

বরগুনা: বরগুনার তালতলীতে পরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিস্বার্থে স্লুইচ গেট খুলে ২০ একর বোরো ধানের বীজতলা ও ঋণের টাকায় রোপণ করা ধানক্ষেতে লবণাক্ত পানি ঢোকানোর অভিযোগ উঠেছে মালেক আকন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের সকিনা ও নিদ্রার চর এলাকার ২৭ জন কৃষক ২০ একর জমিতে এবার ধান চাষ করেছেন।

এর মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী মালেক আকন পরিকল্পিতভাবে স্লুইচগেট খুলে মাছের ঘেরে নোনা পানি উঠিয়েছেন। এতে ২০ একর বোরো ক্ষেতেও নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বোরো চাষিরা। কিছুদিন পরেই কৃষকের ঘরে বোরো ধান তোলা হতো। কিন্তু ফসল তোলার ঠিক আগে আগে নোনা পানি ক্ষেতে ঢুকে পড়ায় ২০ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ বোরো আবাদ করেন। ধান ঘরে তুলতে না পেরে ঋণের ভারে জর্জরিত ২৭ জন কৃষক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।  

এর বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রতিদিনই ওই ২৭ কৃষক পরিবার বোরো ফসলের মাঠে মানববন্ধনসহ অবস্থান ধর্মঘট করছে। বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালেও উপজেলার সকিনা ও নিদ্রার চর এলাকায় ফসলের মাঠে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘট করেছেন কৃষকরা।  

এ বিষয়ে একাধিক কৃষক প্রভাবশালী মালেক আকনের কাছে বলতে গেলে তিনি বলেন, আমার ঘেরে পানি দরকার, তাই স্লুইচগেট খুলে নোনা পানি তোলা হয়েছে। এতে তোমাদের ক্ষতি হলে আমি কি করতে পারি? তোমরা (কৃষকরা) যদি বেশি বাড়াবাড়ি করো, তাহলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। কৃষকরা কোনো উপায় না পেয়ে বিচারের জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিচার চেয়ে অভিযোগ দেন।  

কৃষক মনির আকন বলেন, আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এ বছর এমন বিপদ হবে বুঝতে পারিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী মালেক আকন তার ঘেরে নোনা পানি তোলা আমার দুই একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আমার ক্ষতিপূরণ চাই।

আরেক কৃষক নিজাম জোমাদ্দার বলেন, আমার দেড় একরসহ কৃষদের ২০ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মালেক আকনের কাছে বললে তিনি উল্টো হুমকি দেন। বলেন, তোরা যা পারিস কর, আমি কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারব না।

হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে এ বিষয়ে মালেক আকন বলেন, আমি ঘেরে পানি উঠিয়েছি। তাতে কিছু কৃষদের ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলে, তা হয়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে। আমি পানি উঠানোর আগে সবাইকে জানিয়েছি।  

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন বলেন, নোনা পানির কারণে অনেক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কাছে স্থানীয় মালেক আকনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এসেছে। তিনি বেশি ভালো লোক না, তাই উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানায় যেতে বলা হয়েছে কৃষকদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।