ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

গাইবান্ধায় খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
গাইবান্ধায় খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ  ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ।

গাইবান্ধা: আদিকাল থেকে মাটিতে নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে আসছে মানুষ। চিরাচরিত সেই নিয়ম ভেঙে মাটির অপরিহার্যতা ছাড়াই গাইবান্ধায় খাল-বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে শাক-সবজি ফলাচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা।

 

কলাগাছের ওপর কচুরিপানা পঁচিয়ে বেড তৈরি করে তার ওপর বীজ ছিটিয়ে নানা শাক-সবজির ফলাচ্ছেন তারা। তাদের এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসছে মেলোনাইস সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশের (এমসিসিবি) আওতাধীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা’ উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থা’র ফুড সিকিউরিটি প্রজেক্ট।

গাইবান্ধা সদরসহ নদ-নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে সংস্থাটি।  

সরেজমিন জেলার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঝাড়াবর্ষা বিল ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়েছে। পরপর ভাসমান ৮টি বেড। তাতে চাষ করা হচ্ছে কলমি, লাল, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি।   শুরুতে ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হলেও সফলতা মেলায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা। তুলনামূলক চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা।  



চাষি মতিয়ার রহমান শরিফা বেগম, তহমিনা বেগম জানান, বর্তমানে তারা ভাসমান বেডে লাল, পুঁই ও কলমি ও ডাটা শাক চাষ করেছেন। উৎপাদিত শাক পরিবারসহ খেয়ে প্রত্যেকে সপ্তহে তিন থেকে চারশ টাকা বিক্রি করেছেন। এরপর তারা শীতকালীন সবজি চাষের পরিকল্পনা করছেন। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এ পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার ফিল্ড অর্গানাইজার মমতা খাতুন জানান, গাইবান্ধাসহ উত্তরের ১১টি জেলায় এই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক ভাসমান বেডে সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা বিল, বিষ পুকুর বিল ও গলাকাটা বিলে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজি চাষ চালু করা হয়েছে। এখান থেকে একটি পরিবার নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সপ্তাহে ২৫শ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।  

তিনি বলেন, একটি বেডে তিন থেকে চারবার যেকোনো শাক চাষ করা যায়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ হতে পারে ২৫ ৩০ ফুট (ছোট-বড় হতে পারে)। প্রস্থ চার-পাঁচ ফুট। বেডটি দুইটি স্তরে তৈরি করা হয়। এরমধ্যে নিচের স্তরে কলাগাছ দিয়ে একটি বেড তৈরি করা হয়। ওপরের স্তরের কচুরিপানা দেওয়া হয়। কচুরিপানা পচে গেলে ওপরে বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।  
 তিনি আরও বলেন, সাঘাটার এসব বিল এলাকার লোকজনকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে  আগ্রহী চাষিদের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝাড়াবর্ষা বিলসহ এই এলাকার পৃথক তিনটি স্থানে ২৪টি বেড তৈরি করা হয়েছে।

 
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হাওরাঞ্চলে বেশি হয়। গাইবান্ধার একটি উন্নয়ন সংস্থা ভাসমান বেডে সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটি সাঘাটা উপজেলার তিনটি স্থানে প্রাথমিকভাবে সবজি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে ভাসমান সবজি চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যে আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসাররা তদারকি করছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।