ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানের ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে যাত্রী মিলল ২৯

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৪
বিমানের ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে যাত্রী মিলল ২৯ বোয়িং ৭৭৭ । ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বোয়িং থেকে সদ্য কেনা ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের ঝকঝকে উড়োজাহাজ। বিশাল এ উড়োজাহাজের আসন সংখ্যা ৪১৯।

কিন্তু যাত্রী সংখ্যা মাত্র ২৯ জন।  

এই হলো বিমানের ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটের উদ্বোধনী ফ্লাইটের অবস্থা। লোকসানি ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল। যাত্রী না হওয়ায় এর আগে চালু হয়েও বন্ধ হয়েছিল এ রুট।

প্রকৃত যাত্রী সংখ্যা ছিল ২৯ জন। উদ্বোধনী ওই ফ্লাইটে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও অতিথিদের নিয়ে যোগ হলো আর ২৫ জন।

এত ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার চালিয়েও এই ছিল বিমানের সফলতা। মাত্র ২৯ জন যাত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বিমানকে। ফ্লাইটটি ছাড়ার পর প্রকৃত যাত্রী সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক গোপনীয়তা বজায় রাখা হলো। কেউই প্রকৃত যাত্রী সংখ্যা বলতে চাইলেন না।

গণমাধ্যমের কাছে তথ্যটি গোপন রাখতেই বিমান কর্তৃপক্ষের এ তোড়জোড়। কেউ প্রকৃত যাত্রীসংখ্যার চেয়েও ১০ গুণ বাড়িয়ে বলে সম্মান রক্ষা করতে চাইলেন। এভাবে উদ্বোধনী ফ্লাইটে নিয়ে দিনভর চললো বিমানের নাটক।    

বিমান চলাচল ব্যবসায় কেবিন ফ্যাক্টর (পুরো উড়োজাহাজের মোট আসনের) ৭৫ শতাংশ যাত্রী না হলে ওই ফ্লাইটে কোনোভাবেই লাভ করা সম্ভব নয়। অথচ ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে দিনের পর দিন বিমানের অর্ধেক কেবিন ফ্যাক্টরও হয়নি।

তারপরও বিমানের সুবিধাভোগী এক শ্রেণির শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তি নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পক্ষে কাজ করে আসছিলেন। ওই সময় এ রুটে উড়োজাহাজের অর্ধেক আসনেও যাত্রী পাওয়া যেতো না।    

সে রুটেই পুনরায় ফ্লাইট চালু নিয়ে বিমানের ভেতরেই হাজারো প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু আবারো কেন এ রুট চালু করা হলো? কার স্বার্থে এ উদ্যোগ?

দিনের পর পর দিন লোকসান হচ্ছিল এ রুটে। এক পর্যায়ে ২০০৬ সালে বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্রাঙ্কফুর্ট, নারিতা, ম্যানচেস্টারসহ ৮টি লোকসানি রুট বন্ধ করে দেয়।
 
একইভাবে সদ্য চালু করা বিমানের ঢাকা-ইয়াঙ্গুন, ঢাকা-দিল্লী, ঢাকা-ম্যানচেস্টার ফ্লাইটেও যাত্রী নেই। এসব রুটে বিমান আগেও লোকসান দিয়েছে। তারপরও বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের ইচ্ছাতে একের পর এক লোকসানি রুট চালু হচ্ছে। যেকোনো রুট চালু করার আগে মার্কেট সার্ভে করতে হয়। ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট চালুর আগে তা-ও করা হয়নি।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে একটি রুটে কমপক্ষে চারটি ফ্লাইট না থাকলে ওই রুট থেকে লাভ করা সম্ভব নয়। অথচ সপ্তাহে মাত্র দু’টি ফ্লাইট নিয়ে চালু করা হয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট। মাঝে রোমে যাত্রাবিরতি রাখা হয়েছে। এতে যেমন বিমানের খরচ বাড়বে তেমনি সরাসরি যাত্রীরা এ ধরনের বিরতির ফ্লাইট এড়িয়ে চলবেন।  

এ বিষয়ে জানতে বিমানের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

ঢাকা-ফাঙ্কফুর্ট রুটে বিমানের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বাষট্টি হাজার তিনশ’ ৫৮ টাকা (রিটার্ন টিকিট)। তবে উদ্বোধন উপলক্ষে বর্তমানে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বিমানের এ ভাড়া এই রুটে চলাচলকারী অন্যান্য এয়ারলাইন্সের তুলনায় কম বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

যাত্রাপথে রোমে বিরতি দিলেও রোম থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। ফাঙ্কফুর্ট থেকে রোম পর্যন্ত একই নিয়ম। তবে রোম থেকে ঢাকায় যাত্রী বহন করা যাবে।

উদ্বোধনী ফ্লাইটে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, যে সংখ্যক ‍যাত্রী হয়েছে তা দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ জ্বালানি খরচও ওঠেনি।


বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৪/আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।