কলকাতা থেকে ট্রেনে হায়দ্রাবাদ যেতে যেতে সহযাত্রী এক ওষুধ কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার, কলকাতার মানুষ মনোজ কুমার বললেন, এই সময়ে আপনি হায়দ্রবাদে হালিম পাবেন। এই সময়ে মানে? প্রশ্ন করতে তিনি বললেন, রোজার ইফতারে হায়দ্রাবাদের মানুষ হালিম খায়।
কিন্তু দুদিন ধরে শহরে ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম হালিমের বেশ রাজত্ব। খাবারের দোকানগুলো বেশ বড় বড় করে ইংরেজিতে ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছে, 'হালিম', 'চিকেন হালিম', 'ইরানি হালিম' ইত্যাদি। আচ্ছা, তা না হয় ঝুলতে থাকুক, আমার তাতে কিছু আসে যায় না।
কনফারেন্সের প্রেজেন্টেশন শেষে আমি, বন্ধু-কলিগ শামীম রেজা, চবির শিক্ষক সুদীপ্ত শর্মা এই তিনজনে গেলাম হায়দ্রবাদের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান 'চার মিনার' অঞ্চলে। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ভালো বিরিয়ানি কোথায় পাওয়া যায়? তিনি বললেন 'পিস্তা হাউস' নামের হোটেলটিতে যেতে।
আমরা সেখানে গিয়ে দেখি জমজমাট অবস্থা। একটু দূর থেকে মনে হলো অনেক ভীড়ভাট্টা, মাইকে কীসব ঘোষণা হচ্ছে। তিন তলার এক রেস্টুরেন্ট পিস্তা হাউস। সুদীপ্ত একটু ভালো হিন্দি পারে (হায়দ্রবাদে তেলেগুর পরে উর্দু দ্বিতীয় ভাষা, উর্দুর কাজ হিন্দিতেও চলে), সে খোঁজখবর নিয়ে এসে বললো, বিরিয়ানি বন্ধ, হালিম বিক্রি চলছে। ধুর, বিরিয়ানি খেতে এসে হালিম খেতে হবে? এমনিতে হালিম আমাদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় খাদ্যবস্তু না। তবুও এগুলাম আমরা। কাছে গিয়ে দেখি, এলাহী কাণ্ড! মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, উর্দুতে, এই অটো সরো, ভীড় করো না। সবাইকে ঠিকঠাকমতো হালিম নিতে দাও। আর বলছে, "দুনিয়া কা মশহুর হালিম"। আরও ব্যাপার হলো, পুরো বিক্রির ব্যাপারটা দুটো ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে, আর তা লাইভ দেখা যাচ্ছে বিগ স্ক্রিনে। আমাদেরকেও স্ক্রিনে অনেকক্ষণ দেখানো হলো।
তো হালিম নেয়া হলো। বাটিতে এক অচেনা হালিম। দেখতে ধুসররঙা এক পেস্ট, সঙ্গে খানিক তেল ভাসছে। কিন্তু মুখে দিয়েই মুগ্ধ আমরা। অপূর্ব স্বাদ। ডাল-টাল নেই, কেবল এক মাংসের পেস্ট। পরে খবর নিয়ে জানা গেল, এ কেবলই খাসির মাংস, অন্য কিছু এতে নেই। পিস্তা হাউসের হালিমের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়েছে। প্লেনে করে ইহা বিদেশেও যায়। সন্ধ্যাবেলার একবাটি হালিম, আমাদের ডিনারের অনুভূতি দিল। সেরাতে আর আমাদের ডিনার করতে হয়নি। একবাটি খাসির মাংস বলে কথা।
পরেরদিন কনফারেন্স ভেন্যুতে পেটপুরে লাঞ্চ করে ফেলেছি। ভারতীয় বাঙালি এক অধ্যাপক বাংলাদেশি অধ্যাপকদের জন্য হালিম আনিয়েছেন। তাই খেতে হলো। এবারের হালিমটিতে ডালের সন্ধান পাওয়া গেল। তবে মাংসের দাপট তাতেও কমেনি।
পরিচয় হয়েছে আসামের মানুষ, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক বাহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি উঠেছেন হোটেল র্যাডিসনে, সেখানে আমাদের নিয়ে গেলেন ইফতারি খাওয়াবেন বলে। আমরা রোজা না রেখে দু'দিন ধরে হালিম খাচ্ছিলাম, আবার হালিমের মুখোমুখি। হায়দ্রাবাদী ইফতারে হালিম থাকবেই। তাই আবার হালিম খাওয়া এখানে। দুইদিনে মোট তিনবার হালিম খাওয়া হলো।
অধ্যাপক বাহারুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে এলাম। আমি বাসে করে হোটেলে ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো কোকাকোলার এক বিশাল বিলবোর্ড। তাতে লেখা, "Coca Cola with Halim Tastes Better". তাতে বিশাল এক হালিমের বাটির পাশে ক্ষীণকায় কোকাকোলার বোতলকে অসহায় দেখাচ্ছিল। ইস, আফসোস হচ্ছে, দ্রুতগামী বাসের কারণে বিলবোর্ডের ছবিটা তুলতে পারি নি। ফেসবুক থেকে ।
বাংলাদেশ সময় ০২২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪