ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

ফেঁসে যাচ্ছেন বিমানের আরো রাঘববোয়াল

ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪
ফেঁসে যাচ্ছেন বিমানের আরো রাঘববোয়াল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ ফাইল ফটো

ঢাকা: ফেঁসে যাচ্ছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরো কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে আটক বিমানের ডিজিএম, পাইলটসহ পাঁচজন রিমান্ডে এসে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিকট আরো কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ নামগুলো যাচাই বাছাই করে বড় ধরনের অভিযানে নামবে।

এদিকে গ্রেফতার ডিজিএম এমদাদকে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে এমন তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের এই সিন্ডিকেট অনেক বড়। কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের পর দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও এদের সঙ্গে জড়িত বিমানের অনেক কর্মকর্তা বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিমানের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি রাজনৈতিক নেতার নামও বলেছেন। তদন্তের স্বার্থেই এক্ষুণি তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড শেষ হলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিলে আরো অনেক কর্মকর্তাই গ্রেফতারের আওতায় আসবেন।  

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মাজাহারুল আবসার রাসেল স্বর্ণসহ গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বর্ণ চোরাচালান বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে শুরু করে। রিমান্ড শেষে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে চোরাচালানের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

মূলত তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দু:সাহসী এক অভিযান চালায়। অভিযানে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত বিমানের ডিজিএম ইমদাদ, পাইলট শহিদ, ঠিকাদার পলাশসহ ৫ জনকে আটক করে।

সূত্র জানায়, আটকের পর রিমান্ডের প্রথম দিনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন তারা। তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাদে তারা যেসব নাম বলেছেন সেগুলো প্রায় একই। পাশাপাশি কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কিছু রাজনৈতিক নেতা ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের নামও বলছে। তদন্তের স্বার্থে এক্ষুণি তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। বর্তমানে তাদের বিষয়ে আরো বিশদভাবে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

তবে মহিলা কেবিন ক্রু বা বিমানবালা নিশিকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। নিশির ব্যাপারে রাসেলের দেয়া তথ্য ও পরবর্তীতে গ্রেফতার হওয়া ৫ জনের তথ্যে অনেক মিল রয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।

ডিজিএম এমদাদের বিপুল বিত্ত বৈভব: বিমানের ডিজিএম এমদাদকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ চোরাচালানের কথা স্বীকার করেছে। তাছাড়া তিনি তার বিপুল সম্পদের তথ্য দিয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রটি বলছে, ইতোমধ্যে এমদাদ তার পান্থপথের বিলাসবহুল বাড়ি, গুলশানের মার্কেটে কয়েকটি দোকান এবং তার নিজস্ব একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি থাকার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি কয়েক ব্যাংকে নিজ নামে ও বেনামে কয়েকটি অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার কথা জানিয়েছে।

সূত্র বলছে, রিমান্ডের এখনও তিন দিন বাকি রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তার বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে তার দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই চলছে।   

সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারিদের সংশ্লিষ্টতা: মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রটি বলছে, স্বর্ণ চোরাচালানের কয়েকটি পদ্ধতির মধ্যে একটি হলো বিমানের কর্মকর্তা বা অন্য বাহকরা স্বর্ণ ফ্লাইট থেকে নেমে সিভিল এভিয়েশনের সিকিউরিটি ও ট্রলি ম্যানদের দিয়ে দেয়। অ্যাপ্রোন এলাকায় মূলত ট্রলিম্যান ও সিকিউরিটির লোকজন বেশি থাকে। বাইরের বাহক অথবা বিমানের পাইলটরা কখনো কখনো স্বর্ণগুলো টয়লেটের মধ্যে রেখে আসে। এরপর সিকিউরিটি অথবা ট্রলিম্যানরা সেগুলো সুযোগ বুঝে নিয়ে কৌশলে বাইরে চলে যায়। এছাড়াও বাহকরা অনেক সময় পাচারকৃত স্বর্ণ অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়েই সিকিউরিটি অথবা ট্রলিম্যানদের দিয়ে দেয়। পরে তারা সুযোগ বুঝে পাচার করে দেন। স্বর্ণ পাচারকারী সিভিল এভিয়েশনের এই চক্রটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কাস্টমসের সহকারী কমিশনার প্রিভেনটিভ রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক সময় অ্যারাইভাল ওয়াশরুমেও স্বর্ণ উদ্ধার করেছি। মূলত বাহকরা ফ্লাইট থেকে নামার পর ওয়াশরুমে রেখে আসে। এরপর কিছু অসাধু ট্রলিম্যান বা সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা লোকজন সেগুলো কৌশলে বের করে বাইরে দিয়ে আসে। সিভিল এভিয়েশনের কিছু অসাধু ট্রলিম্যান, সিকিউরিটি এবং কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত এমন গোয়েন্দা তথ্য আমাদের নিকট রয়েছে।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান বিষয়ে বিমানের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় আগেও চাউর ছিল। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে তারা গ্রেফতারের বাইরে ছিলেন। কিন্তু বিমানের কেবিন ক্রু রাসেল গ্রেফতারের পর বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আরো যেসব কর্মকর্তা আছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বাইরের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলে চোরাচালান অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪

** ধর্মপু্ত্রের স্বর্ণকাণ্ডে বেসামাল জামাল
** স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের ১০ কর্মকর্তা
** এ সেই প্রতাপশালী পলাশ!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।