ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

স্বর্ণ চোরাচালানের ‘নিয়ন্ত্রক’ বিমানের দুই ক্যাপ্টেন ও জিএম!

ইশতিয়াক হুসাইন ও আদনান রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪
স্বর্ণ চোরাচালানের ‘নিয়ন্ত্রক’ বিমানের দুই ক্যাপ্টেন ও জিএম! মাঝে ক্যাপ্টেন ইশরাত, ডানে ফার্স্ট অফিসার শামীম ও বামে জিএম আতিক

ঢাকা: স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পদস্থ দুই কর্মকর্তা আটক হওয়ার পর এবার তদন্তে আরো ৩ জনের নাম পাওয়া গেছে।

এরা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ডিরেক্টর ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ ও ফার্স্ট অফিসার শামীম নজরুল এবং এয়ারপোর্ট সার্ভিসের জিএম আতিক সোবহান।



কার্যত এরা স্বর্ণ চোরাচালান চক্রেরই একটি অংশ। ঝোপ বুঝে কোপ মারেন তারা। পক্ষ নেন কোন শক্তিশালী বিভাগ বা সংস্থার। এরাই কখনো মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙ্গান, আবার কখনো ঘাড়ে চাপেন বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র বাংলানিউজকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ১৯ নভেম্বর স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশসহ মোট পাঁচজনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

তবে বিমানের পাঁচ কর্মকর্তা আটক হওয়ার পরপরই শামীম নজরুল কানাডা পাড়ি দেন।
ক্যাপ্টেন ইশরাত বর্তমানে ফ্লাইট নিয়ে ঢাকার বাইরে রয়েছেন।

জিএম আতিক সোবহান শনিবার রাতে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ সভা চলাকালে ‘বলাকা’য় উপস্থিত ছিলেন।

পরিচালক থাকাকালে ক্যাপ্টেন ইশরাত ক্ষমতার দাপটে গত তিন বছরে যা খুশি, তাই-ই করেছেন। আর আতিক সোবহান এ সময়ে দু’বার পদোন্নতি পেয়েছেন।

একই সময়ে তিনি প্রশাসনের জিএম এবং বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের জিএম’র দায়িত্ব পালন করেন।
 
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ইশরাত এবং শামীম নজরুল স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের মদদ দিচ্ছেন জিএম আতিক সোবহান।
 
সূত্র জানায়, তারা বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নানা কায়দায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ পৌঁছে দিতেন। বাংলাদেশ বিমানে পাচারকৃত সোনার সব চালানের বিষয়ে আগে থেকেই জানা থাকতো তাদের।

সম্প্রতি, বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

আদালত তাদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা ক্যাপ্টেন এবং জিএমের সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করেন।

রিমান্ডে আসামিরা নিজেদের সংশ্লিষ্টতাসহ প্রতিটি স্বর্ণ চোরাচালানের সময় বিমানের কার কী ভূমিকা ছিল, সে বিষয়ে তথ্য দেন। তবে আসামিদের প্রত্যেকেই ওই তিনজনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানান গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা জানান, স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় বিমানের ক্যাপ্টেন-কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। রিমান্ডের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাদের নাম উঠে আসবে, তাদের ধরতে অভিযান চালানো হবে।

বিমানের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে।

এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে জিএম (পিআর) খান মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।