ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানবালা ও পাইলট ভাড়ার ব্যবসায় ইউএস-বাংলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫
বিমানবালা ও পাইলট ভাড়ার ব্যবসায় ইউএস-বাংলা

ঢাকা: ভাড়া নিয়ে ডাকাতি, ফ্লাইট শিডিউলে বিশৃঙ্খলার বদনাম নিয়ে চলছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ‘ইউএস-বাংলা’। এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের পর এবার তারা নেমেছে ককপিট ক্রু (বৈমানিক) ও কেবিন ক্রু (বিমানবালা) ভাড়ার নতুন ব্যবসায়।

   

দ্বিগুণের বেশি দামে তারা বৈমানিক ও কেবিন ক্রু ভাড়া দেওয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে তারা ৮ জন বৈমানিক ও ৭ জন কেবিন ক্রু ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবে একজন ফার্স্ট অফিসারের (কো-পাইলট) জন্য তারা প্রায় তিন লাখ টাকা চান, একজন ক্যাপ্টেনের (পাইলট) জন্য তারা চান ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। অথচ ইউএস-বাংলার একজন ক্যাপ্টেন বেতন পান সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা। ফার্স্ট অফিসার পান এক লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত বিমানের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) ম্যানেজ করে তাদের প্রস্তাবে রাজি করাতে সক্ষম হন।   

৬ মাসের জন্য এ চুক্তি করে তারা। বলা হচ্ছে, আগামী এপ্রিল মাস থেকে বিমানের চালু হওয়া অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালাতে যতো বৈমানিকের প্রয়োজন হবে তার সব সরবরাহ করবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিয়মিত ফ্লাইট হওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কিছু বৈমানিক ও কেবিন ক্রু অলস পড়ে রয়েছেন। তাছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে ফ্লাইট চালুর ৬ মাসের মধ্যে তৃতীয় আরো একটি উড়োজাহাজ আনার ঘোষণা দিয়েছিল তারা। সে অনুযায়ী তারা কিছু বৈমানিক ও কেবিন ক্রুকে নিয়োগ দেয়। ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই উড়োজাহাজের কোনো খবর নেই। এ অবস্থায় এসব অতিরিক্ত বৈমানিক ও কেবিন ক্রুকে ভাড়ায় খাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

এরই মধ্যে আগামী এপ্রিল মাস থেকে বিমান সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয়। এজন্য তারা ইজিপ্ট এয়ার থেকে ৭৪ আসনের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ আনার চুক্তি করে। কিন্তু বিমানের বৈমানিক নেই। ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ চালাতে বৈমানিকদের ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছে বিমান। এসব বৈমানিক প্রশিক্ষিত হয়ে তৈরি হতে প্রায় ৬ মাস সময় লাগবে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাতে বেশ কিছুদিন ধরেই লবিং করতে থাকে ইউএস-বাংলা। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়।
 
US_Bangla_Airlinesইউএস-বাংলার বহরে বর্তমানে দুটি ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজ রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করে ইউএস-বাংলা গ্রুপের মালিকানাধীন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এর কয়েকদিন পরেই গ্রাউন্ডেড হয়ে যায় এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ।   

‘ফ্লাই সেফ, ফ্লাই ফাস্ট’ স্লোগান নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ঘটা করে এয়ারলাইন্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেই ঘটে এই ফ্লাইট বিপর্যয়।

ওই সময় এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছিলেন, তারা অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ এনেছেন। আর তাই তাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে তারা সফল হবেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এই আত্মবিশ্বাসী বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার যে বিশাল ফাঁরাক তা স্পষ্ট হলো মাত্র কয়েকদিনের মাথায়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাওয়া না গেলেও বিষয়টি নিয়ে ওই এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ভাড়া দেওয়ার রীতি বিশ্বের সবখানেই রয়েছে। নিজের উড়োজাহাজ চালিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৈমানিক ভাড়া কিভাবে দেওয়া সম্ভব- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা তৃতীয় উড়োজাহাজ আনা উপলক্ষে কিছু বৈমানিক ও কেবিন ক্রু নিয়োগ দিয়েছিলেন। এখন তা সময়মতো না আসায় বিকল্প উদ্যোগ নিয়েছেন।

বিমানের এক কর্মকর্তার বক্তব্য, ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ চালানোর বৈমানিক তাদের নেই। এজন্য বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। প্রশিক্ষিত বৈমানিক না আসা পর্যন্ত আপদকালীন হিসেবে এসব বৈমানিককে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।