সিলেট থেকে: প্লেন থেকে নেমেই বেশ অবাক হতে হলো। সাধারণত লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, কিন্তু যাত্রীর আগেই কনভেয়ার বেল্টে হাজির লাগেজ।
একজনতো সেলফি তুলতে গিয়ে দেরিই করে ফেললেন। তাকে লাগেজ নিতে হলো কনভেয়ার বেল্টের শেষ প্রান্ত থেকে। আর লাগেজ পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, বাংলাদেশ এতো ফাস্ট হয়ে গেছে ভাবতেই পারছি না।
বলছিলাম সিলেট ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কথা। আর যে উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ এতো দ্রুত লাগেজ যাত্রীদের বুঝিয়ে দিলেন সেটিও কোনো বিদেশি কোম্পানি নয়, দেশীয় কোম্পানি ‘ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স’।
প্লেন থেকে লাগেজ নামানো এবং ট্রলিতে করে কনভেয়ার বেল্টে ছাড়ানো দৃশ্য উল্লেখ করার মতো। রোবটের মতো ক্ষিপ্র গতিতে কাজ করছিলেন ইউএস বাংলার লোকজন। খানিকটা পুরনো আমলে সেই লেটার প্রেসে কাগজ ছাপানোর মতো। একহাত দিয়ে কাগজ সরানো একই সঙ্গে আরেক হাত দিয়ে আরেকটি কাগজ মেশিনে ভরানো। যেনো এক মিনিটের ফুসরত নেই তাদের।
শুধু কি লাগেজ সার্ভিস, সিডিউল, প্লেনের ভেতরের সার্ভিস মুগ্ধ হওয়ার মতো। দুপুর ১২টা ৫৫মিনিটে শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা।
দুপুর সাড়ে ১২টায় প্লেনে তোলা হয় যাত্রীদের। ১২টা ৪২মিনিটে ইঞ্জিন চালু করা হয়। আর ১০মিনিটের মাথায় রানওয়েতে ওঠে সিলেটগামী প্লেনটি। কাটায় কাটায় ১২টা ৫৬ মিনিটে উড়াল দেয় প্লেনটি।
সময় মতো এই যাত্রায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সিলেটগামী প্লেনের যাত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও প্রাইভেটাইজেন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী।
বাংলানিউজকে জানান, ওরা অনেক ভালো করছে। সেবার মান ধরে রাখতে পারলে অনেক ভালো করবে।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সিডিউল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যাত্রীরা এর সঙ্গে মিলিয়ে তার প্রোগ্রাম ঠিক করে। এসময় বাংলাদেশ বিমানের সিডিউল বিপর্যয় নিয়ে হাতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেক সময় ফ্লাইট ডিলে হলে কারণও জানানোর মতো লোক পাওয়া যায় না। তখন হতাশা ও ক্ষোভ বেড়ে যায়। ইউএস বাংলা পুরো ব্যতিক্রম। বিদেশি অনেক বড় বড় কোম্পানির চেয়েও তাদের সেবার মান অনেক ভালো লাগল।
আন্তর্জাতিক রুটে সীমিত আকারে ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। পরিসর আরও বাড়ানো দরকার বলেও মন্তব্য করেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী।
সকালে বোডিং পাস সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতাও চমকপ্রদ। কাউন্টারে পা দিতেই মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন কাউন্টার ম্যানেজার শিলা। মাত্র ২০ সেকেন্ডে বোডিং পাস বুঝে দিলেন। একই সময়ে আরেকজন লাগেজ বুঝে নিয়ে দিলেন ছুট।
সিলেটগামী ফ্লাইটটির যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ৭৬ জন। এদিন ৭৩ জনকে যাত্রা করতে দেখা গেলো। এই রুটে কখনই সিট ফাঁকা থাকে না বলেও জানালেন কেবিন ক্রু সাদিয়া।
প্লেনের ভেতরে কিছু যাত্রীর উটকো যন্ত্রণাও শতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেলো। দু’একজন সিট থেকে দাঁড়িয়ে, আবার একজন যাত্রী ল্যান্ডিংয়ের সময় সেলফি তোলার চেষ্টা করছিলেন তখন মুচকি হাসি দিয়ে প্লিজ বলেই নিবৃত করলেন কেবিন ক্রু সাদিয়া।
প্রতিটি ধাপেই ছিল আন্তরিকতার ছাপ। কিভাবে এতো আন্তরিকতা সম্ভব হলো এমন প্রশ্নের জবাবে হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ইউএস বাংলার ইনাচার্জ ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এমডি স্যার একটি কথা বলেছেন, সবার আগে যাত্রী সেবা। আমি কোনো অভিযোগ শুনতে চাই না।
দেশির এই এয়ারলাইন্সটি সারা দেশের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে প্রত্যেকদিন একটি করে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ৬টি, ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-যশোর রুটে দিনে দু’টি ফ্লাইট, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে সপ্তাহে তিনদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
পথচলা বেশিদিন না হলেও এরই মধ্যে যাত্রীদের আস্থা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে অনেক কোম্পানির ফ্লাইট যখন ফাঁকা যাচ্ছে তখন ইউএস বাংলা যাত্রীদের চাহিদা মতো টিকেট দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এসআই/এসএইচ