ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

কাজী আবার মু্ক্তিযোদ্ধা হলেন কবে?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
কাজী আবার মু্ক্তিযোদ্ধা হলেন কবে?

ঢাকা: তিরিশ বছর চাকুরি শেষে যখন বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হলো- তখনই হঠাৎ নিজেকে ঘোষণা দিলেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্বা।

সেই ঘোষণা শুনে অনেকেই হতবাক।

আর এ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে এখন হৈচৈ, তোলপাড় চলছে।  

বিমানের ডিজিএম সৈয়দ আহসান কাজী এই ঘোষণা দিয়ে এখন নানা জল্পনা-কল্পনার পাত্র।  

কারণ- মু্ক্তিযোদ্বা হওযার মানেতো চাকরিতে বহাল তবিয়তে আরও একবছর। সঙ্গে ভাতাদি রয়েছে। রয়েছে পদোন্নতিরও সম্ভাবনা। সঙ্গে আরও কতো কি! 

মাত্র এক মাস পরে যার চাকরি সমাপ্ত করে বিমান ছাড়ার কথা তার এমন ঘোষণা কিছুতেই মানতে পারছে না অধস্তনরা। ভালোভাবে নেননি বিমানের ব্যবস্থপনা পরিচালকও। এমডি থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সবারই একটা প্রশ্ন- কাজী আবার মু্ক্তিযোদ্বা হলেন কবে? 
 
সন্দেহ সংশয়টা আরও বেশি এজন্য যে, তিনি নিজেকে মু্ক্তিযোদ্বা দাবি করছেন- অথচ বলতে পারছেন না, কোন সেক্টরে যুদ্ব করেছেন, কে তার সেক্টর কমান্ডার। কেউ কেউতো এও বলতে ছাড়ছেন না- রাইফেলের গুলিতে এক সঙ্গে কজনকে মারা যায় সেটাই বলতে পারবেন না আহসান কাজী।

যদি মুক্তিযোদ্ধাই হবেন তাহলে এত বছর কেন তিনি মু্ক্তিযোদ্বার ভাতাদি-সুবিধাদি গ্রহণ করেননি? 
 
প্রশ্ন যেমনই হোক, সন্দেহ সংশয় যতোই থাকুক,আহসান কাজী কিন্তু একটা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বিমানে জমা দিয়েছেন, এ তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।  

এতে তার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় অস্বীকার করার উপায় থাকলো না। যদিও বিমানের পরিচালক প্রশাসন বেলায়েত হোসেন মুক্তিযোদ্বা সার্টিফিকেট দেখে শুরুতেই কিছুটা সংশয়ে প্রকাশ করেছেন।  

তাতে কাজী কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গে কদিন খুব দৌড়ঝাপ করেছেন বলেই সংশ্লিষ্টরা জানালেন। একবার ছুটে গেছেন তার পরিচালক ডক্টর সাফিকুর রহমানের কাছে-আরেক বার গেছেন বেলায়েত ও মমিনের রুমে। অনেক চেষ্টা তদ্বীরেও পর তিনি সেটা গ্রহণ করাতে  সক্ষমও হয়েছেন।  
 
১৯৮৬ সালে বিমানের ট্রেনিং শাখায় ইন্সট্রাক্টর পদে চাকুরিতে যোগ দেন সৈয়দ আহসান কাজী। বিএনপি জোট সরকারের আমলে তাকে ট্রেনিং শাখা থেকে জনসংযোগ শাখায় বদলি করে নিয়ে আসেন তৎকালীন ডিজিএম জহিরুল হক। এরপর কাজী নিজেকে মীর নাছিরের আত্মীয় পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১০ সালে দুবাইয়ের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়ে টানা পাঁচ বছর কাটান।  

অভিযোগ রয়েছে, তার আমলেই দুবাই থেকে পাঠানো শুরু হয় বিমানের উড়োজাহাজে বড় বড় সোনার চালান। ঢাকায় এ সব অভিযোগ নিয়ে তদন্তেও নামে গোয়েন্দারা।  

আগামী ৩১ আগষ্ট ছিলো তার চাকুরির বয়স ৫৯ বছর শেষ হবার তারিখ। কিন্তু তার আগেই তিনি ঘোষণা দিয়ে বসলেন তিনি মুক্তিযোদ্বা।  
 
এদিকে কাজীর এই সার্টিফিকেট কিভাবে প্রকৃত অর্থেই আসল নাকি নকল তা যাচাইয়ের জন্য বিমান থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিমান মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও খোঁজ লাগানো হয়েছে।  

ওদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি গেজেট ভুক্ত হওয়া অনেক সার্টিফিকেটই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ভুয়া সার্টিফিকেটে তিন বছর চাকরির পর পুলিশের কজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে দুদক। এখন কাজীর সার্টিফিকেট ওই রকম ভুয়া গেজেটভুক্ত কিনা সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদকের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিমানের ক’জন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়- মুক্তিবার্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত তালিকার কোথাও নেই আহসান কাজীর নাম।  
 
এ বিষয়ে বিমানের একজন পরিচালক বলেন, ত্রিশ বছর ধরে বিমানের চাকরি করার সময় একদিনও কেউ শুনতে পায়নি কাজী মুক্তিযোদ্বা। এমনকি তিনি কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন- কোন সেক্টরে কার অধীনে যুদ্ব করেছেন, কি ধরণের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করেছেন- সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারেন না।  

সম্প্রতি বলাকায় সাংবাদিকদের এ ধরণের প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।

জানা গেছে, ওই প্রশ্নে কাজীর উত্তর ছিলো, একাত্তরে তো সব মুক্তিযোদ্বা অস্ত্র চালানো শেখেননি। যুদ্ধও করেননি। ক্যাম্পে অন্যান্য সেবামুলক কাজ করেছেন। সেজন্য কি তিনি মুক্তিযোদ্বা নন?

প্রশ্ন যেমনই হোক, সন্দেহ সংশয় যতোই থাকুক, সৈয়দ আহসান কাজী একটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বিমানে জমা দিয়েছেন। আর তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।  

তবে বিমানের এমডি মোসাদ্দেক আহমেদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কাজী মুক্তিযোদ্বা কি না তা আমি নিশ্চিত নই। তবে কাজীকে শর্ত দেয়া হয়েছে যদি এ সার্টিফিকেট ভূয়া প্রমাণিত হয় তাহলে বিমান থেকে মুক্তিযোদ্বা কোঠায় প্রাপ্ত সব বেতন ভাতাদি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। ’ 
 
এদিকে কাজীর সার্টিফিকেট নিয়ে গোটা বিমানে চলছে কানাঘুঁষা। কি করে তিনি এ সার্টিফিকেট যোগাড় করলেন সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনে জনে।  
 
বিগত বিএনপি জামায়াতের জোট সরকারের বিমানমন্ত্রী মীর নাছিরের ঘনিষ্ট বহুল আলোচিত এই কাজী বর্তমান সরকারেরও একজন মন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দিচ্ছেন।  

এ বিষয়ে বিমানের একজন পরিচালক বলেন-ত্রিশ বছর ধরে বিমানের চাকরি করার সময় একদিনও কেউ শোনেনি কাজী মুক্তিযোদ্বা।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্বা হিসেবে সুবিধা নিতে হলে সরকারি নিয়ম হচ্ছে চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্বা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ জমা দেওয়া। কাজী এমন ঘোষণা দেননি।  

হঠাৎ করে মুক্তিযোদ্ধার ফাইল আসায় তা তিনি আটকে রাখেন। কিন্তু তদ্বিরের জেরে ওই ফাইলে অনুমোদন দিতে বাধ্য হন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ওই পরিচালক।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।