ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

‘হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর’, ৬ কর্মকর্তা বরখাস্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
‘হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর’, ৬ কর্মকর্তা বরখাস্ত

দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্লেনটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে বলে একটি তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিমানের পরিচালিত এ তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঢাকা: দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্লেনটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে বলে একটি তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিমানের পরিচালিত এ তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।


 
‘রাঙা প্রভাত’ নামে ওই ফ্লাইটটির জরুরি অবতরণের কারণ হিসেবে ‘হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর’ উল্লেখ করে বুধবার (৩০ নভেম্বর) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে।  

সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিমান পরিবহনমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানান। তিনি সংবাদ সম্মেলন করার খানিকবাদেই মন্ত্রণালয় থেকে বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়।

মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফ্লাইটটি যখন লাহোর অতিক্রম করছিল তখন তারা (সংশ্লিষ্ট বিভাগ) দেখতে পান ওয়েল প্রেসার কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যখন এমডি ও ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে জানানো হয়, তখন এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর) অনুযায়ী নিয়ারেস্ট (নিকটস্থ) ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার জন্য বলা হয়। তখন তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদে ল্যান্ড করে প্লেনটি।
 
“আমাদের সৌভাগ্য, এটা তাৎক্ষণিকভাবে ডিটেক্ট করা গেছে এবং প্রধানমন্ত্রী আশখাবাদে অবস্থানকালেই তারা অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাটি ডিটেক্ট করে ফেলেন। ”
 
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সমস্যাটি হচ্ছে, অয়েল যে পাইপ দিয়ে আসে সেই পাইপের নাট ঢিলা ছিল। এ কারণে সমস্যাটি হয়েছে। এই হলো ফাইন্ডিংস।
 
বিমানের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, এখানে (তদন্তে) তিনটি ফ্যাক্টর তারা বিবেচনা করেছেন। প্লেনের ম্যাটেরিয়াল বা প্লেনের কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ কিনা, অথবা এনভায়রনমেন্টাল কোনো ব্যাপার কিনা অর্থাৎ বেশি ঠাণ্ডা বা ঝড় কিনা অথবা হিউম্যান ফ্যাক্টর ঘটেছে কিনা।
 
“রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিপাদ্য হয়েছে, এটিই (হিউম্যান ফ্যাক্টর) সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যদিও আমাদের অন বোর্ড ইঞ্জিনিয়াররা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা সারিয়ে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ‘হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর’কে তারা প্রধান বলে চিহ্নিত করেছেন। ”
 
মন্ত্রী বলেন, ‘হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর’ চিহ্নিতকরণের ভিত্তিতে বিমানের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ৫ জন বা তার ১-২ জন বেশিও হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমি আশা করি আজ রাতে বা কালকে সেই ব্যবস্থা তারা নেবেন।
 
একদিন আগে সিকিউরিটি গ্রুপের হাতে প্লেনটি হ্যান্ডওভার হয়ে যায় জানিয়ে বিমান পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সেখানে স্পেসেফিক, যারা সেই মুহূর্তে রেসপন্সিবল ছিলেন সেই পাঁচজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো তদন্ত রিপোর্টটি যখন হবে তখন যারা রেসপন্সিবল ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম না দেওয়া মন্ত্রীকে ফাঁকি দেওয়া কিনা- এমন প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, এমন কিছুর কোনো অবকাশ নেই। তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ১ (১ ডিসেম্বর) তারিখ, আমরা আজকে নিয়ে এসেছি।
 
শাস্তি কী হবে- জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, আপাতত তাদের সাসপেনশন হবে। এখানে লুকানোর কোনো বিষয় নেই। শাস্তি এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যা হয়, প্রক্রিয়াগতভাবে তার ব্যবস্থা করা হবে।
 
এ ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবে দেখছি- এটা বিমানের অদক্ষতার প্রমাণ হচ্ছে।
 
“এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমানকে ঢেলে সাজানো হবে কিনা, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত, আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো। প্রয়োজনে এসওপি রিভিউ করে সংশোধন করা হবে। ”
 
বিমানে মানুষ আস্থা হারাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে মানুষের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হয়। সংকট হবে তা সাধারণ ঘটনা।  

সংকট কাটাতে কী করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বিমান যেন স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হয় সেটা করবো।
 
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বিমানের বর্তমান যে আইনটি আছে সেটা কোম্পানি আইন। মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ বলতে এখানে আছে কেবল তারা তাদের কার্যক্রম আমাদের জানাবে। তার বাইরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। দুর্ভাগ্যক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে আইন করেছে, এটা সেভাবেই রয়ে গেছে। এটা না হয়েছে কোম্পানি, না হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান।
 
এই আইন সংশোধন নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
 
মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ পরই বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ৬ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার কথা জানানো হয়। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- বিমানের ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এসএম রোকোনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসেন এবং টেকনিশিয়ান ছিদ্দিকুর রহমান।

হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটির পর জরুরি অবতরণের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  

সেই ৩ কমিটির মধ্যে বিমানের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানালেন মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
  
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬/আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।