এর ফলে এখন থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই সংস্থার ২ ট্রেড ইউনিয়ন ও ৩ শ্রমিক সংগঠনের ওপরও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে। আন্দোলনের নামে সিবিএ সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, ধর্মঘট ও গণ জমায়েত করতে পারবে না।
বিমান সূত্র জানায়, সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে করেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে বিমান কর্মীদের চাকরিকে জরুরি সেবার আওতায় আনা হলো। কোন কর্মী যদি কর্তৃপক্ষের দেয়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সব শ্রেণীর চাকরি জনগণের জীবন যাত্রা নির্বাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য আবশ্যক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ১৯৫৮ সালের এসেন্সিয়াল অ্যাক্টে যা যা আছে আমরা তার সবটাই কার্যকর ও বাস্তবায়ন করবো।
এদিকে বিমানের সব সেবা অত্যাবশ্যক ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোববার বিমানে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ সিদ্ধান্তে অফিসারদের মাঝে স্বস্তির নিশ্বাস নেমে এলেও ইউনিয়ন কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে।
বেশ ক’জন অফিসার জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৪৫ বছর ট্রেড ইউনিয়নের কাছে জিম্মি রয়েছে বিমানের ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তুচ্ছ অযুহাতে ধর্মঘটের হুমকি দেয়া, কাজ বন্ধ করে দেয়া, ফ্লাইট উড়তে না দেয়া, হাতে নাতে চুরি ধরার পরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় অফিসারকে লাঞ্ছিত করা, দরজায়-জানালায় লাথি মারা, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে দিগম্বর করার মতো ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড সম্ভব হয়েছে শুধু শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নের কাছে জিম্মি থাকার কারণে।
বর্তমানে বিমানের দু’টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এর একটি বিমান শ্রমিক লীগ, অপরটি বিমান ১৯১৭ অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়ন। এছাড়া পাইলট, কেবিন ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের আরো ৪টি সংগঠন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিমান কর্তৃপক্ষ এসব ইউনিয়নের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সিবিএ নেতা মশিকুর রহমান, মন্তাছার রহমান ও বাপা নেতা মাহবুব কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে বিমানের কার্যক্রম অচল করে দিয়ে আসছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কাজ না করে ইউনিয়ন অফিসে আড্ডাবাজি আর চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে শীর্ষ কর্তৃপক্ষের।
ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ ছাড়া বিমানে কোন ধরনের নিয়োগ, পদোন্নতি, পোস্টিং হয় না। সর্বশেষ নিয়োগ বাণিজ্যে মশিকুর ও মন্তাছারের লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি এখন দুদকে তদন্তাধীন।
জরুরি সেবার আওতায় আনার ফলে বিমান এখন এসব রাহু থেকে মুক্ত থাকবে। তবে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিমানকে শুধু এসেনশিয়াল সার্ভিস ঘোষণা করলেই হবে না, পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। অফিসারদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। জবাবদিহিতা ও যে কোন ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সব ইউনিয়ন অফিসকে সিলগালা করে দিতে হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আরও কঠোর হাতে এসব অপশক্তিকে দমন করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ সিনিয়র অফিসার নিয়োগ দিতে হবে।
তাদের মতে, বর্তমান প্রশাসনের অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা সিবিএ নেতাদের কাছে জিম্মি। তারা এখন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন- যা বিমানের মতো একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করবে।
এ প্রসঙ্গে বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর এম জাকিউল ইসলাম বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে বিমানের শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা ফিরে আসবে। শীর্ষ মহল সঠিক সময়ে কঠোর সিদ্বান্ত নিতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যে কোন আদেশ জারি করতে পারবে।
সূত্রমতে, বছর তিনেক আগে সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে বিমানকে অত্যাবশ্যক ঘোষণার দাবি সম্বলিত একটি প্রস্তাবনা দেন। এরপর গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের নাট ঢিলে হবার ঘটনায় দেশ বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। তখন সিভিল এভিয়েশন, মন্ত্রণালয় ও বিমান থেকে তিনটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিভিল এভিয়েশনের তদন্ত কমিটি তাদের বেশ কয়েকটি সুপারিশের মধ্যে শীর্ষে রেখেছিল-বিমানকে অবিলম্বে অত্যাবশ্যকীয় সেবার আওতায় আনার বিষয়টি। তারই ধারাবাহিকতায় এ ঘোষণা এলো।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
জেডএম/