ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

রানওয়েতে লেজের বাড়ি, বেঁচে গেলো বিমানের বোয়িং

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
রানওয়েতে লেজের বাড়ি, বেঁচে গেলো বিমানের বোয়িং বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর ফাইল ফটো

ঢাকা: আবারও পাইলটের অদক্ষতা ও ভুলে বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়েছে। রোববার (২ এপ্রিল) রাতে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর নতুন কেনা বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্র্যাফটটি হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে।

বিমানের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাইলটের ভুলে টেক অফের সময় উড়োজাহাজটির টেলের (লেজে) সঙ্গে রানওয়েতে বড় ধরনের ঘর্ষণ হয়।

সাধারণত এ ধরনের দুর্ঘটনা কবলিত এয়ারক্র্যাফট মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যেতে পারে।

তবে টেল স্কিড (স্প্রিং) থাকায় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।

এ প্রসঙ্গে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, রোববার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বিজি-০২৭ ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আবুধাবী যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। পাইলট টেক অফ করার পর বুঝতে পারেন, প্লেনটির লেজের সঙ্গে রানওয়ের ঘর্ষণ লেগেছে। এরপর পাইলট বিমানবন্দরের টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইটটি ফের অবতরণের ক্লিয়ারেন্স চান। রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি আবারো শাহজালালে অবতরণ করেন। এরপর ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের অপর একটি ফ্লাইটে আবুধাবী পাঠানো হয়।

তবে টাওয়ারের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরও পাইলটের ঝুঁকিপুর্ণভাবে আরো আড়াই ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর ঘটনা বড় ধরনের ঝুঁকিপুর্ণ ছিল।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ঘটনায় পাইলট ও ফার্স্ট অফিসারের অজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় আকাশে চলন্ত অবস্থায় এয়ারক্র্যাফটের মাঝ বরাবর ভেঙ্গে পড়ার আশংকা ছিল। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারতো যাত্রী ও ক্রুরা। নিয়ম অনুয়ায়ী, এক্ষেত্রে পাইলটের উচিত ছিল দ্রুত বিমানবন্দরের আশপাশে কোথাও অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ফেলে দিয়ে জরুরি অবতরণ করা। আড়াই ঘণ্টা ফুয়েল পুড়িয়ে তারপর অবতরণ করা কোনোভাবেই  ঠিক হয়নি।

বিমানের নতুন কেনা এই বোয়িংয়ে ফিউল ডাম্পিং সিস্টেম ছিল। পাইলট ইচ্ছে করলে মুহূর্তেই সব তেল ডাম্পিং করতে পারতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি তা অনুসরণ না করে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ডাম্পিং করায় একদিকে যাত্রীদের জানমাল যেমন চরম ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছেন, তেমনি সিডিউলেরও ক্ষতি করেছেন।

কিন্তু এ ঘটনায় বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন সংশ্লিষ্ট পাইলট ও কো পাইলটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার পাইলট ও কো পাইলটকে তাৎক্ষণিক গ্রাউন্ডেড করে তাদের রক্ত ও মানসিক পরীক্ষা করানোর কথা।

কিন্তু বিমানের প্রধান ডাক্তার তাসলিমা জানান, সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি এ ধরনের কোন চিঠি পাননি। বিমান ম্যানেজমেন্ট ও সিভির এভিয়েশনের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর তিনি পাইলট ও কো পাইলটের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবেন।

জানা গেছে, ওই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন আহসান জয়। আর কো পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) ছিলেন ক্যাপ্টেন অন্তরা। ওই ঘটনার পর তাদের দুজনকেই সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে।

বিমানের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ বলেন, এ ঘটনার কারণ নির্ণয়ের জন্য তদন্ত শুরু হযেছে। একই সঙ্গে ফ্লাইটটি মেরামত সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এয়ার কমোডর জাকিউল ইসলাম বলেন, সাধারণত এ ধরনের উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় টেল স্কিড করে না। বিমানেও অতীতে এমনটি ঘটার কোন নজির নেই। তবে মাঝে মাঝে উড়োজাহাজ অবতরণের সময় পাইলটের অদক্ষতা, ভুল বা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে টেল স্কিড করতে পারে।

বিমানের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, তারা ইতোমধ্যে উড়োজাহাজটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছেন। বোয়িংয়ের চেক লিস্ট অনুযায়ী ১৮ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তারা উড়োজাহাজটি অপারেশনের জন্য তৈরিও করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।