ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানের অবহেলায় হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট এয়ারপোর্টে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৭
বিমানের অবহেলায় হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট এয়ারপোর্টে ফাইল ফটো

ঢাকা:  খোলা আকাশের নিচে কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য পড়ে আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে সব।  আর এসব আমদানি পণ্য নষ্ট হওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিমানের উদাসিনতা ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

ব্যবাসায়ীদের অভিযোগ, এসব আমদানি পণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও কোনো ধরনের সাড়া নেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের।

বিমানের কার্গো শাখা সূত্রে জানা গেছে, কার্গো কমপ্লেক্সসহ পুরো এলাকার মালিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

আগে কার্গো আউট ইয়ার্ডের আয়তন ছিল ১ হাজার ৭০০ বর্গফুট। বেবিচক কর্তৃপক্ষ এখান থেকে ১ হাজার বর্গফুট নিয়ে গেছে। তাই এখন কার্গো রাখার জন্য আউট ইয়ার্ডে মাত্র ৭০০ বর্গফুট জায়গা আছে বিমানের। এ কারণে ২-৩টি ফ্লাইট নামলেই ভয়াবহ কার্গো জট দেখা দিচ্ছে।

বর্তমানে বিমানবন্দরে পণ্য রাখার লোকেশনগুলো হচ্ছে- ‘জিরো’, ‘ক্যানোপি-১’, ‘স্ট্রং রুম ১, ২’, ‘মেইন ওয়্যারহাউস-১, ২’। আর আমদানি ও রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য মনোনীত কাস্টডিয়ান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমানের ফ্লাইট অফিসারের দেয়া লোকেশন অনুযায়ী পণ্যগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার দায়িত্ব বিমানের লোডারদের। কাস্টমস ডিউটি ও গুদাম ভাড়া পরিশোধের পর ডেলিভারির জন্য পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় বিমানের লোডাররা ইচ্ছে করে অন্যান্য স্থানে পণ্য রেখে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অযুহাত তুলে ধরে। বিমান কার্গো কমপ্লেক্স।  ফাইল ফটো

বন্ডেড ও ওয়্যারহাউসের হিসেবে এসব পণ্য থরে থরে সাজানো থাকার কথা। কিন্তু ওয়্যারহাউসগুলোয় র‌্যাক থাকলেও তাতে প্লেট নেই। ফলে মালামাল রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন আর অবহেলায় মালামাল ফেলে রাখা হচ্ছে।

ফলে কার্গো গোডাউন, ওয়ারহাউস ও ক্যানোপি থেকে রানওয়ে পর্যন্ত অবহেলা আর অযত্নে স্তূপ হয়ে পড়ে থাকা আমদানিকৃত মূল্যবান মালামাল বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে।

সঠিকভাবে পণ্য সংরক্ষণ হচ্ছে না- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে বিষয়টি সুরাহার জন্য বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু সেই আলোচনা শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এয়ারলাইন্স অবতরণ করার ৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই ফ্লাইটের মালামাল কার্গো গোডাউন,ওয়্যারহাউস কিংবা ক্যানোপি এলাকায় পৌঁছাতে হবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছে মালামালের এয়ারওয়ে বিল দিতে হয়। সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ এই বিলের কপি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ বিমানের কার্গো কর্তৃপক্ষকে দিলে তারা মালামাল ডেলিভারি দেবে। কিন্তু এটি অনুসরণ করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ বিমানের অব্যবস্থাপনার কারণেই এসব পণ্য নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পণ্য নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ৩টি সংস্থার সমন্বয়হীনতা, একগুঁয়েমি, চুরি, দুর্নীতি আর খামখেয়ালির কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের আমদানি খাত। এতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।

তবে বাংলাদেশ বিমানের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কার্গো) আরিফ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কিছু সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য অথরাইজড ব্যক্তি আমি না। এখানে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করে। কিছু জানার থাকলে বিমানের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।