১১ আগস্টের সেই বিস্ময়কর অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তাই ওই দিনই গঠন করে দেওয়া হয় ৩ সদস্যের কমিটি। ৭ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয় তাদের।
তাহলে কি দেশের প্রধান গেটওয়েতে ঘটা এই ঘটনা গুরুত্ব হারিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে? দেশের পরিচয় বহনকারী এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অগ্নি নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে এতো ঢিলেমির কি কারণ? বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর গা-ছাড়া ভাব কি তবে অবহেলারই ইঙ্গিত? ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে কোনো রা নেই কেনো? এয়ারপোর্ট অথরিটি নিজেরা এমন দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সক্ষম না হলে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে মিলে আরো বড় নিরাপত্তা উদ্যোগের পথে হাঁটছে না কী কারণে?
যদিও এসব প্রশ্নের বিপরীতেই অবস্থান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। ঢিলেমির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বলা হচ্ছে, শিগগিরই এয়ারপোর্টের অগ্নি নির্বাপনে অটোমেটিক ডিভাইস আসছে। সেই যন্ত্র আগুনের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভাতে সক্রিয় হয়ে উঠবে।
কিন্তু ৭ দিনের তদন্ত রিপোর্ট ২৩ দিনেও কেনো জমা হলে না? এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রের জবাব, সময় বাড়ানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধনও বলছেন, সময় বাড়ানো হয়েছে। আমরা রিপোর্ট সাবমিট করার প্রক্রিয়ায় আছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র যদিও বলছে, অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনার পর এ বিষয়ে কোনো টেকনিক্যাল বা পরামর্শ সভার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এয়ারপোর্টে। অগ্নি নির্বাপনের কোনো মহড়াও হয়নি গত ২৩ দিনে।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আহমেদ এর ভাষায়, অগ্নিকাণ্ডের পর এয়ারপোর্টে তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি।
গত ১১ আগস্ট বেলা দেড়টার দিকে এয়ারপোর্টের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘণ্টা চারেক থমকে থাকে এয়ারপোর্টের সার্বিক কার্যক্রম। বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের সরবরাহ। সেই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয় বহির্গমনের কার্যক্রম। এতে আন্তর্জাতিক রুটের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিড়ম্বনায় পড়ে। এয়ারপোর্টের ভেতরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মী, যাত্রীসহ উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। লাগেজ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হজযাত্রীরা।
মূল টার্মিনাল ভবন থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের কারণে প্রচুর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের প্রায় দু্ই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় বটে, তবে জমাট ধোঁয়া বের করে দিতে শেষ পর্যন্ত গ্লাস কাটতে হয় এয়ারপোর্টে।
ওই ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা ব্যাখ্যার খবর পাওয়া যায়নি। অটো ফায়ার ডিটেকটরের ডিসপ্লেতে ‘ফায়ার অন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লোর’ লেখা দেখা যাওয়ার কথা কোনো কোনো যাত্রী উল্লেখ করলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো বিবৃতি দেয়নি।
তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন ছাড়াও ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মামুন মাহমুদ ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মান্নান।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ তখন বলেন, আগুন লাগার কারণ এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু ওই ঘটনার ২৩ দিনের মাথায় তার বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে অগ্নিকাণ্ডের আসল কারণ জানা যাবে। তবে আমরা প্রস্তুত। বিমানবন্দরের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা আরো সুরক্ষিত করার প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসকে সব সময়ই পাশে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭
জেডএম/