এক্ষেত্রে সেই মান্দাতার আমলেই রয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিচালন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স! দেশের প্রায় সব জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত সংস্থারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেরিফায়েড পেজ রয়েছে। এগিয়ে রয়েছে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোও।
কেবল নেই বিমানের। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত যাত্রীদের কোনো আনন্দ, বেদনা বা ক্ষোভই যেনো ছুঁয়ে যেতে পারে না বিমান কর্তৃপক্ষকে। আর যাত্রীরাও বিমানের কোনো অফার কিংবা ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানতে পারছেন না।
চলতি মাসের ১২ তারিখে (১২ জুলাই) ফেসবুকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নামের পেজে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়।
সঙ্গে লেখা হয়, ‘এনজয় দি ফুটেজ অব আওয়ার নিউ বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ টেস্ট ফ্লাইট টেক অফ ইন ইউএসএ। ’
ভিডিওটি এরই মধ্যে ২৫ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে, দেড় হাজারের মতো লাইক পড়েছে, আর শেয়ার হয়েছে ২২৪টির মতো। মন্তব্যও (কমেন্টস) করেছেন অনেকে-ই।
মন্তব্যে বিমান যাত্রীরা জানিয়েছেন, তাদের অনুভূতি, কষ্ট আর আনন্দের কথা। আবার হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে কারো কারো মন্তব্যে। কিন্তু সমস্যা নিয়ে এসব বক্তব্যের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ কিংবা প্রত্যুত্তর দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
কেবলমাত্র প্রশংসা বাক্যের জবাব দিয়েই কাজ সেরেছেন তারা। বিমানের বিদেশি যাত্রীদের সমালোচনা বা জিজ্ঞাসার কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। আবার যতটুকু জবাব দেওয়া হয়েছে, তাতেও রয়েছে ভুল তথ্য।
ভিডিওটির নিচে কমেন্টস বক্সে শারার আশরাফ সৌমিক নামে একজন লিখেছেন, ‘ভুল তথ্য। এই ভিডিওটি আমেরিকার নয়। এটা যুক্তরাজ্যের ফার্নবুর্গে অবতরণের ছবি। ’
জবাবে বিমান কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, ‘‘শারার, এটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাত্রা করে ‘আকাশনীনা’র যুক্তরাজ্যের র্ফানবুর্গে নামার ছবি, ধন্যবাদ। ’’
শারারের মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে বিমান কর্তৃপক্ষ, ‘আকাশবীণা’কে ‘আকাশনীনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আর জোস রদ্রিগো নামে এক বিদেশি বিমান বহরে ‘ড্রিমলাইনার’ যুক্ত হওয়ার এই আনন্দ ঘোষণার পোস্টে লিখেছেন, তো কী হয়েছে! এতে কোনো পরিবর্তন হবে বলে তো মনে হয় না। এতে কী বিমান সময়ানুবর্তি হবে? সময় মতো চলবে? আমি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে বসে আছি। কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়াই বিমানের ফ্লাইট যাত্রা বিলম্ব থেকে বিলম্বিত করছে। যাত্রীদের কাউকেই কিছু জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি। এটাই কী বিমানের ভদ্রতার রীতি বা নমুনা! আমি বিমানের ইতিহাস খুঁজছিলাম, যেখানে অন্তত একবার দেখতে পাবো বিমান যথাসময়ে ছেড়েছে বা অবতরণ করেছে!’
এ অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য তো দূরে থাক, সংশ্লিষ্টরা দেখেছেন বলেই মনে হয়নি! অথচ জোস রদ্রিগো ছাড়া যারা প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন সবারই প্রত্যুত্তর দিয়েছেন পেজটির কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বিমানে নিয়মিত চলাচলকারী এক যাত্রী বলেন, কর্তৃপক্ষের হয় তো ইচ্ছা-ই হয়নি, বিমান নিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার শিকার ভুক্তভোগী যাত্রী রদ্রিগোর সমস্যা শোনার। অথবা দেখেও না দেখার বান করে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাকে দায়িত্বও মরেনি তারা।
‘শুধু ফেসবুক নয়, সব ক্ষেত্রেই যাচ্ছে-তাই অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিকে চালানো হচ্ছে। যেনো দেখার কেউ,’ বলেন ওই ক্ষুব্ধ বিমানযাত্রী।
পেজের অন্য একটি পোস্টে প্রবাসী এক বাংলাদেশি লিখেছেন, লন্ডন থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বিমান ক্রুর কাছে চা চেয়েছিলাম। জবাবে এমন ব্যবহার পেয়েছি যে ফেরার পথে রাগে ক্ষোভে, অন্য এয়ারলাইন্সে লন্ডন এসেছি।
আর এই মন্তব্যের পর বিমান সংশ্লিষ্টরা যেনো ঝাপিয়ে পড়েছেন তার ওপর। এমনকি বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি তারা। তেমনি একটি পোস্টে ওই যাত্রীকে কটাক্ষ করে লেখা হয়, ‘বিমান কি চা খাওয়ার স্থান না চা স্টল!’
যাত্রীদের অভিযোগ, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বাজার সম্প্রসারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দেশি-বিদেশি যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের কোনো চেষ্টা তো সংস্থাটির নেই-ই, বরং যাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সংঘবদ্ধ ও আক্রমণাত্মক জবাবে মানুষকে হেয় করছে সংস্থাটি।
বিমানযাত্রী সাজিদ হক বাংলানিউজকে বলেন, থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ব্যাংকক যাচ্ছিলাম। বোর্ডিংয়ের সময় ঢাকায় সংস্থাটির স্টাফ আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে এয়ারলাইন্সটির ফেসবুক পেজে কমপ্লেন করি।
‘কিছুক্ষণ পর ইমিগ্রেশন পার হয়ে এয়ারক্র্যাফটে ওঠার পর ওই স্টাফ আমার কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইনবক্সে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। সেখানে মনে হচ্ছে বিমান হলে হয়তো আমার কপালে দুঃখ ছিল। ’
বিমানের ফেসবুক পেজে দেখা যায়, ইতোমধ্যে এক লাখ ১৪ হাজার ৩৯১ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী লাইক দিয়েছেন; আর ফলোয়ার রয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৬জন।
তথ্য অনুযায়ী, পেজটাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব পেজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পেজের টিম মেম্বার হিসেবে নাম রয়েছে বিমানের স্যোশাল মিডিয়া ম্যানেজার রাহাত করিমের।
তবে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলানিউজকে বলেন, বিমানের কোনো নিজস্ব বা ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ নেই। বর্তমান পেজটি রাহাত করিম নিজ উদ্যোগে চালাচ্ছেন। নিজস্ব ও ভেরিফায়েড পেজ না থাকায় এখানে আসা কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্যের জবাব দেওয়ারও দায়বদ্ধতা আমাদের নেই।
‘তবে বিমান কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে একটি ভেরিফায়েড পেজ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে কেবল এই কাজের জন্য একটি টিম তৈরি থাকবে। যারা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা যাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন এবং অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করবেন,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
আরএম/এমএ