ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

টিকিটের আশায় ঢাকায় ১৫ দিন পার হাবিলের

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২০
টিকিটের আশায় ঢাকায় ১৫ দিন পার হাবিলের মোহাম্মদ হাবিল পাটোয়ারী

ঢাকা: দিনের আলো সূর্যোদয় হওয়ার আগেই হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে এসে অপেক্ষা শুরু, আবার সেখানেই সূর্যাস্ত পেরিয়ে অন্ধকার, কিন্তু সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট আর ধরা দেয় না ঝিনাইদহের কোর্ট চাঁদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাবিল পাটোয়ারীর।  

সারাদিনের অপেক্ষা আর ক্লান্তি শেষে তিনি খালি হাতেই ফিরে যান হোটেল সোনারগাঁও থেকে।

সেখান থেকে গিয়ে তার রাত কাটে ফ্লাইওভারের নিচে, আবার কোনো দিন কাওয়ানবাজার সবজি বাজার এলাকায়। আবার কখনো ফুটপাতে। এভাবেই তিনি পার করেছেন টানা ১৫ দিন। তবুও সোনার হরিণ টিকিট পাননি হাবিল।  

মঙ্গলবারও (৬ অক্টোবর) সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে টিকিটের জন্য ঘোরাফেরা করছিলেন হাবিল পাটোয়ারী। টিকিট নিতে এসে জীবনের যে অভিজ্ঞতা, সেটা তুলে ধরেন বাংলানিউজের কাছে।  

হাবিল পাটোয়ারী বলেন, ‘স্যার, ২১ সেপ্টেম্বর সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের জন্য ঢাকায় এসেছি। এখনো অবস্থান করছি, টিকিট পাইনি’।  দিন শেষে অপেক্ষা করে টিকিট না পেলে হতাশ মন নিয়ে শুয়ে রাত কাটাই ফ্লাইওভারের নিচে। কোনোদিন কাওয়ানবাজারে। সেখানে রাতের সবজির শ্রমিকরা যেখানে ঘুমান, সেখানেই পাশে শুয়ে কাটে আমার রাত। এভাবেই চলছে টানা ১৫ দিন। টয়লেটে ধরলে পাবলিক টয়লেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসি।  

হাবিল বলেছিলেন, গ্রাম থেকে আসার সময় সাত হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কষ্ট করে কলা-রুটি খেয়ে দিন পার করেছেন। পুরো এক সপ্তাহ তিনি ভাত খাননি। ১৫ দিনে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখনো সঙ্গে তিন হাজার টাকা রয়েছে।  

ঝিনাইদহের এই বাসিন্দা সৌদি আরবের আবাহা প্রদেশে একটি নির্মাণ কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত জানুয়ারিতে তিনি দেশে এসে করোনা মহামারির কারণে আটকা পড়েন। এপ্রিলে তার ফেরত যাওয়ার কথা থাকলেও এতদিন সৌদির সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তিনিও আটকা পড়েন অন্যদের মতো।  

হাবিল বলেন, প্রতিদিনই সোনারগাঁও টোকেনের আশায় আসি। কিন্তু মানুষের ভিড়ে আর ঢুকতে পারিনি। এজন্য টোকেনও পাচ্ছি না। অনেক প্রচেষ্টার পর একদিন টোকেন হাতে পেলাম। তারিখ ছিল ৪ অক্টোবর। কিন্তু সেদিন এত মানুষের জনসমাগমে টিকিট দেওয়া বন্ধ রাখে সৌদি এয়ারলাইন্স।  পরে সোমবারও (৫ অক্টোবর) আসি টিকিট নিতে। অনেক অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় আমাকে ডাকা হলো। তখন সৌদি এয়ারলাইন্সের লোকজন বললো, কালকেই (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আমার ফ্লাইট। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে করোনা পরীক্ষা, রিপোর্ট পাওয়া, চার ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো, এসব চিন্তা করে আর টিকিট নেই। তারা বললেন, তোমার সামনে একটি অপশন আছে, কালকের (মঙ্গলবার) টিকিট না নিলে তাদের কিছু করার নেই। শেষে বললো, মঙ্গলবার আবার আসতে। তাই আজকে এলাম, দেখি কী হয়।  

ওই প্রবাসী বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ সেপ্টেম্বরেই শেষ হয়েছে। আকামার মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়েছে কফিল। এখন দুইদিন ধরে সৌদি এয়ারলাইন্স ভিসার মেয়াদ কম যাদের, তাদেরকে টিকিট দিচ্ছে। এখন আমার কী হবে বুঝতে পারছি না। আবার কফিলও বলছে, এ সপ্তাহের মধ্যেই গিয়ে পৌঁছাতে।   আজও অপেক্ষায় রয়েছি, দেখি কী হয় 

আরও পড়ুন>>মঙ্গলবার সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট পাবেন ৩০০ যাত্রী

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২০
টিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।