ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয় চেয়ে চিঠি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২২
জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয় চেয়ে চিঠি

ঢাকা: উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল অর্থাৎ জেট ফুয়েলের দামকে অতিমূল্যায়িত উল্লেখ করে দামের যৌক্তিক সমন্বয় চেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।

সংগঠনের মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত ওই চিঠি রোববার (০৬ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অতি মূল্যায়িত জেট ফুয়েলের কারণে এভিয়েশন খাত অস্তিত্বের সংকটে নিপতিত। কেননা এয়ারলাইনের পরিচালনা ব্যয়ের ৪০-৪৬ ভাগই জ্বালানি খরচের ওপর নির্ভরশীল। এভিয়েশন খাত দীর্ঘ করোনাকালের অভিঘাতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি এই খাতে উপর্যুপরি আঘাত করেছে। ফলে এয়ারলাইনসগুলির দেউলিয়া ঘোষণা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

জেট ফুয়েল বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য বাংলাদেশে প্রায়শই আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হয়। ফলে জিএমজি, ইউনাইটেড এবং রিজেন্টের মতো সম্ভাবনাময় এয়ারলাইনসগুলি দেউলিয়া হয়েছে। জেট ফুয়েল বিক্রির একক কর্তৃত্ব পদ্মা অয়েল কোম্পানির থাকায় এয়ারলাইনসগুলি প্রতিযোগিতামূলক দামে জেট ফুয়েল কেনার অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে একই জ্বালানি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানির চেয়ে ১৫-২৫ শতাংশ বেশি মূল্যে কিনতে হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, অতি সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জ্বালানি মূল্য পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানি মূল্য ৯ সেন্ট (প্রায় দশ টাকা) কমিয়ে ১ ডলারে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অভূতপূর্ব। প্রতিমাসে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ৪৪.৫ লাখ লিটার জেট ফুয়েল ব্যবহৃত হয়, পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৫.০৩ কোটি লিটার প্রয়োজন হয়। জেট ফুয়েলের সামগ্রিক চাহিদা বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মাত্র ৮ শতাংশ।

সাম্প্রতিক মূল্য সমন্বয়ের ফলে অভ্যন্তরীণ জ্বালানিতে বিপিসির আয় মাত্র ২.২২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকে ৫০.৩ কোটি টাকা লোকসান হবে, যা বছর শেষে ৬০০ কোটি টাকার পুঞ্জিভূত লোকসানে পর্যবসিত হবে। এমন পদক্ষেপের যৌক্তিক কারণ অনুধাবন করা যথার্থই দুঃসাধ্য। অথচ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মাত্র ১ সেন্ট মূল্য বৃদ্ধি করে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি দ্বিগুণ করা সম্ভব হতো। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানি মূল্য ইন্টারন্যাশনাল জেট ফুয়েল প্রাইস ইনডেক্স অনুসারে হয়, অপর পক্ষে অভ্যন্তরীণ মূল্য পার্শ্ববর্তী ভারতীয় এয়ারপোর্টগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, যা যৌক্তিক প্রতীয়মান হয় না।

অভ্যন্তরীণ জ্বালানির অতিমূল্যায়নের ফলে উড়োজাহাজের টিকিট মূল্য যাত্রীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, ফলে যাত্রী সংকট লক্ষণীয়, যা সাধারণ চাহিদার এক তৃতীয়াংশ কম। এর ফলে সরকারের সার্বিক কর আদায় প্রতিমাসে ৭.২ কোটি টাকারও কম হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টর এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ যাত্রীর ৭৫ ভাগের বেশি পরিবহন করে থাকে। কিন্তু বিদ্যমান জ্বালানি মূল্য পরিস্থিতিতে এই খাতের ধ্বংস অনিবার্য। ফলে আকাশ পথে যোগাযোগের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাধ্যম না থাকার ফলে দেশের সার্বিক ব্যাবসা বাণিজ্য স্থবির হবে। বাংলাদেশকে অন্যতম এভিয়েশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে।

সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এওএবির প্রস্তাবনা
১। দেশীয় প্রাইভেট সেক্টর এয়ারলাইনস এবং হেলিকপ্টার অপারেটরদের জন্য সরাসরি পারটেক্স পেট্রোলিয়াম থেকে জ্বালানি ক্রয়ের অনুমোদন।

২। প্রয়োজনে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিদেশ থেকে জেট ফুয়েল আমদানির অনুমোদন প্রদান।

৩। অভ্যন্তরীণ জ্বালানি মূল্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানি মূল্যের সাথে সমন্বয় করা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২২
এমকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।