তাই সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শীর্ষ পদে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) জায়গা পেতে এরইমধ্যে পদপ্রত্যাশীরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য ও প্রতিটি জেলা থেকে নির্বাচিত ২৫ জন কাউন্সিলর কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হবেন। এই কাউন্সিলররা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। কিন্তু এতোদিন এই প্রক্রিয়ায় ‘সিন্ডিকেট’র প্রভাব ছিল অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সমঝোতার ভিত্তিতে সিলেকশনের’ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গত বুধবার (২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ীই প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়েছে। তালিকায় আসা আগ্রহীদের ডেকে প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, সেটা হয়ে গেলে সেভাবে (প্রেস রিলিজে ঘোষণা) হবে। এতে সফল না হলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট হবে। ’
গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এখনও কমিটি গঠন করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটির একইসঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পদপ্রত্যাশীদের আবেদন সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র শেখর মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, পদপ্রত্যাশী ১০৯ জন তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
বুধবার থেকেই কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৫ মে রাত ৮টা পর্যন্ত।
ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রলীগের জন্য পরিশ্রম করেছি। এবার শীর্ষ পদের জন্য নিজের আবেদন জমা দিয়েছি। পারিবারিক বংশ-পরিচয় দেখে নতুন নেতা নির্বাচন করা হোক। ’ তবে গঠনতন্ত্র ও নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সম্মেলনে প্রার্থীদের বয়সসীমা ২৭। কিন্তু সম্মেলন করতে সাধারণত দেরি হয় বলে বয়সসীমা অঘোষিতভাবে ২৯ বছর ছিল। এবার যেহেতু সম্মেলন তাড়াতাড়ি হচ্ছে সেজন্য বয়সসীমা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাখার পক্ষে অধিকাংশ পদপ্রত্যাশী। তবে কয়েক মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন থাকায় অভিজ্ঞদের প্রয়োজন, সেজন্য বয়সসীমাও বিবেচনার প্রত্যাশা অন্যদের।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু জাতীয় এবং দলীয় বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে এবার খুব হিসাব-নিকাশ করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী এবং পরীক্ষিত কর্মীদের দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গঠন হবে। নেতৃত্ব বাছাইয়ে বিগত দশম সংসদ নির্বাচন বানচালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় কার কী ভূমিকা ছিল সেটিও আমলে নেওয়া হচ্ছে।
কারা মাঠে ছিল, কারা ছিল না সেই হিসাবও কষছে হাইকমান্ড। কেবল পদের আশায় দৌড়ালে চলবে না, যারা মাঠে থেকে সংগঠনকে সক্রিয় রেখেছে তারাই মূল্যায়িত হবে।
নেতারা বলছেন, কোনওভাবেই বির্তকিত কাউকে নেতৃত্বে রাখতে চাইছে না নীতি-নির্ধারণী পর্যায়। আগামীতে যেন ছাত্রলীগের কারণে কোথাও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিক বিবেচনা করে পরিচ্ছন্ন ও মেধাবীদের ঠাঁই হবে এবারের কমিটিতে। সেদিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে পরিবারের রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর।
গুঞ্জন রয়েছে এবারের শীর্ষ চারটি পদে (কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী অঞ্চল গুরুত্ব পাবে। এছাড়াও বরাবরের মতো থাকছে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের গুরুত্ব। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের দৌড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন- কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক সোহেল উদ্দীন, সহ-সম্পাদক জায়েদ বিন জলিল, স্কুল ছাত্রবিষয়ক উপ-সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, স্যার এ এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার। আলোচনায় আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ভূঁইয়া মো. ফয়েজউল্লাহ মানিকের নামও।
বরিশাল অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. রুহুল আমিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক আল-নাহিয়ান খান জয়, কৃষি শিক্ষা সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, আপ্যায়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, প্রচার বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফ, সহ-সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, উপ-কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আরিফ আলী।
ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবির, স্যার এ এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিজয় একাত্তর হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, ঢাবি শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সরদার আরিফুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। ।
উত্তরবঙ্গ (রংপুর ও রাজশাহী) থেকে নেতৃত্বের দৌড়ে রয়েছেন- দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
এছাড়া খুলনা অঞ্চল থেকে শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চৈতালী হাওলাদার চৈতি, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগের নাম। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের নামও আসছে সামনে। সিলেট অঞ্চল থেকে ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান রয়েছেন আলোচনা।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, পাঠাগার বিষয়ক উপ-সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইবনে আহমেদ সুমন, স্কুলছাত্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক অসীম কুমার বৈদ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আপেল মাহমুদ, হাসান আহমেদ খান ও এম এম নাজমুল হাসানসহ কেন্দ্রের শীর্ষপদপ্রত্যাশী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৮
এসকেবি/এইচএ/