শনিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে একেএম সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম-বিএনপিসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে সম্প্রতি গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘ওরা নির্বাচনের জন্য জোট করেনি। এর ভিন্ন চিত্র। কারণ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গণসংযোগ ছিল। সেদিন তিনি আসেননি। অথচ সেদিন নারায়ণগঞ্জের মুন্সীখেলায় বাসে চড়ে সন্ত্রাসীরা এসেছিল। বাস থামানোর কারণে পুলিশকে গুলি করে দেয় তারা। এটা ছিল পরিকল্পিত। কারণ একটি মোটরসাইকেলে করে চারজন পালিয়ে যায়। ’
‘এসবের উদ্দেশ্য কী? কামাল সাহেবরা কী করতে চান? দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। ২১ আগস্ট করবেন, নাকি এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু করবেন? আমার মতো আওয়ামী লীগারদের হত্যা করবেন? আমাদের মুখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, এমনকি মৃত্যুমুখেও আমরা বলে যাবো আমরা শেখ হাসিনার লোক ছিলাম আছি আর থাকবো। ’
দেশের আকাশে শকুন উড়ছে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, ‘যতবার নারায়ণগঞ্জ জেগেছে ততবার সারা বাংলাদেশ জেগেছে। এটা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। এ নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক আন্দোলন হয়েছে। ’
এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্য হয়েছে। তিনি ভেবেছেন আমরা স্টুপিড। কারণ তিনি বলছেন, ২০ দলের সঙ্গে ঐক্য হয়েছে কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য হয়নি। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হয়েছে, কিন্তু তারেক রহমানের সঙ্গে নয়। তিনি ভেবেছেন আমরা আহাম্মক, আমরা লেমন জুস খাই। আমার লজ্জা লাগে। ছোটকালে তার (ড. কামালের) কোলে-পিঠে উঠেছিলাম। ’
বক্তব্যের এক পর্যায়ে শামীম ওসমান উপস্থিত সবাইকে হাত মুঠো করিয়ে শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল থাকা এবং নৈরাজ্য মোকাবেলার শপথ পাঠ করান।
শামীম ওসমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে কঠিন সময় আসছে। দেশ কী আফগানিস্তান হবে নাকি দেশ এগিয়ে যাবে। সে সিদ্ধান্ত দেশের মানুষকে নিতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আর ড. কামালেরা এখন নির্বাচনের জন্য মাঠে নামেননি। তারা মাঠে নেমেছেন নির্বাচনকে বানচাল করতে। বিএনপি জানে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সে কারণেই নির্বাচন থেকে সরে যেতে। আর সে কারণেই তারা এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে কাছে টেনে নিয়েছে যারা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের ব্যবহার করে কিছু একটা করতে। ’
শামীম ওসমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ড. কামালদের বলছি যদি মনে করেন আমাদের ওপর আঘাত করবেন, করেন- আপত্তি নেই। কিন্তু আমার দেশের জনগণের ওপর আক্রমণ হলে নারায়ণগঞ্জবাসী আর বসে থাকবে না। তখন সবাই আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী ঢাকায় গিয়ে উঠবো। দেখবো তখন কে ঠেকায়। একদিন নেত্রীর কথায় ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু আর না। জনগণের ওপর হামলা করলে বসে থাকবো না। আমরা জানি বিদেশ থেকে টাকা আসছে। অনেক কিছু হচ্ছে। বিদেশে আর দেশে বসে অনেক পরিকল্পনা করছে। ’
‘যদি কেউ মনে করেন বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর আঘাত করবেন, নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) উপর হামলা করবেন তাহলে আপনারা টিকতে পারবেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমরা পরাধীন হওয়ার জন্য রাজনীতি করতে আসিনি। তখন কোনো নির্দেশের জন্য বসে থাকবো না। আমি সকলকে অনুরোধ করবো। আপনারা প্রস্তুত থাকেন। এ লড়াইয়ে আমরা জিতবো। আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা। আবারও ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। সকলকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। শত্রু কিন্তু আমাদের ভেতরেও আছে। শুনতে পাই, যুদ্ধাপরাধী অনেক পরিবারের সঙ্গে আমাদের অনেকের লোকজন যোগাযোগ রাখছেন। পরিকল্পনা করছেন শামীম ওসমানকে ঠেকাতে। ’
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
এইচএ/