এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বিদ্রোহী প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। আর বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে উত্তাপ বাড়ছে নির্বাচনী মাঠে।
বিভাগের অধিকাংশ উপজেলাতেই দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এতে করে প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরাও। দলে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ৩৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিভাগের সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার ১৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সোমবার।
এই ১৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদেই প্রার্থী হয়েছেন ৬৮ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরানার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৪৭ জন। যার মধ্যে দল মনোনীত ১৮ জন ছাড়াও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ২৯ জন।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১০ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জনের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে তাহিরপুর ছাড়া অন্য ৯টি উপজেলাতেই রয়েছে আওয়ামী লীগের ১৮ বিদ্রোহী প্রার্থী। একই অবস্থা হবিগঞ্জ জেলাও। এই জেলার ৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীর সংখ্যা ২৯। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১১ জন।
আর দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ হবে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ১৯টি উপজেলায়। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১২টি। শুধু ফেঞ্চুগঞ্জ ছাড়া অন্য ১৮টি উপজেলায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
এ দুই জেলার মধ্যে রোববার সিলেটের ১১টি, মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর পরই প্রতিটি উপজেলায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মনোনয়নবঞ্চিতরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়ে তাদের কেউ কেউ নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। ফলে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রায় তিন মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে দলের ভেতরের বিদ্রোহ নিয়েই ক্ষমতাসীন দলকে বিপাকে পড়তে হতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুইবারের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ। তার সঙ্গে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক এবং শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলা সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ। এ তিনজনের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদকেই বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তে এজাজুল হক এজাজ স্বাভাবিকভাবে নিলেও ক্ষুব্ধ সুজাত আলী রফিক। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক বলেন, আশফাক আগেরবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাকে এবার ছাড় দেবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কেন্দ্রীয় নেতারাও তৃণমূলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেননি। এ অবস্থায় আমি আমার সমর্থক ও অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো কী করবো। আলোচনা করেই আমি ঘোষণা করবো আমার সিদ্ধান্ত। তারা যা চাইবে আমি তাই করবো।
জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজও বলেন, শ্রমিক লীগের সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবো, কী করবো।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন তার অনুসারীরা আনন্দ উল্লাস মিষ্টি বিতরণ করলেও এরইমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামিম আহমদ। তিনি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
শামিম আহমদ বলেন, কেন্দ্র কাকে মনোনয়ন দিয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবো। এতে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতেও আমার কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, কেন্দ্র হয়তো বহিষ্কার করবে। তবে নির্বাচনে জিতলে আবার ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরবে একই সঙ্গে আওয়ামী লীগে আরও পদ পদবিও বাড়বে বলে জানান তিনি।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম কিবরিয়া হেলাল। কিন্তু তাকে মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের একাংশ। এ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ ঢাকা অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেন, সিলেটে এসে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
বিয়ানীবাজার উপজেলায় দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অতাউর রহমান খান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাবেক উপজেলা ভাই চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব।
কানাইঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কৃষকলীগ সভাপতি আব্দুল মুমিন চৌধুরী। কিন্তু তার মনোনয়ন পাওয়া মেনে নিতে পারেননি তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। মনোনয়নবঞ্চিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি আবুল খায়ের চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আবুল খায়ের চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ সময় থেকে দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। তাদের দাবি, আমি নির্বাচন করি। আগামী ১৮ মার্চ ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করবো জনগণ আমার সঙ্গে রয়েছেন। তার এই বিজয়মালা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সব উপজেলার সবার সঙ্গে আবার বসে আলোচনা করা হবে। সবাইকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হবে। এরপরও কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এনইউ/জেডএস