সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি-ই থাকছেন এমনটি মনে করছেন অনেকে। যদিও এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীসহ চারজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সভাপতি পদে প্রার্থী হতে চান বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন একই কমিটির সহ-সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী এম এম মুজিবুর রহমান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং খুলনা চেম্বারের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকসহ আট প্রার্থী রয়েছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
আগামী ১০ ডিসেম্বর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। তাই এই সময়ে এসে সম্মেলন ঘিরে চলছে নানা মেরুকরণ।
সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক ও তেরখাদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক অসিত বরণ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আখতারুজ্জামান বাবু, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হুমায়ূন কবির ববি।
বিশেষ করে একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতা প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে বলেই মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতে, সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে এখন সবার দৃষ্টি রয়েছে। নিজ অনুসারীদের মধ্যে একান্ত আলোচনায় কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদপ্রত্যাশী নেতার অনুসারীরা তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ তোরণ নির্মাণ করেছেন। করেছেন পোস্টারিং।
নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, তারা অপেক্ষাকৃত তরুণ, কর্মঠ ও সৎ নেতৃত্ব চান।
দীর্ঘদিনের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এমন প্রত্যাশিই করেছেন তৃণমূলের এই নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ১০ মাস পর ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর ৭০ সদস্যের জেলা কমিটি অনুমোদন পায়। ওই সময় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা অসুস্থ থাকায় সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করতেন।
মোস্তফা রশিদী সুজা ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়ে। এবার সম্মেলনের আগে জেলার একটি মাত্র উপজেলা পাইকগাছা ছাড়া আর কোনোটিতেই সম্মেলন করতে পারছে না জেলা কমিটি।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করি। ১৯৮১ সাল থেকে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। দীর্ঘপথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। দুর্দিনে আমি আওয়ামী লীগের পাশে ছিলাম সেক্ষেত্রে আমি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে এক নম্বরে আছি বলে মনে করি।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছি। চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছি। দুর্দিনে অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। দলের জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করেছি। সেই দিক থেকে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে সবচেয়ে বেশি দাবিদার। এখন দলকে সংগঠিত করতে চাই। যে কয়জন প্রার্থী সাধারণ সম্পাদক হতে চান তাদের মধ্য থেকে ত্যাগের দিকে আমি সবার থেকে এগিয়ে।
তিনি বলেন, দল যদি ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করে তাহলে আমি আশা করি সাধারণ সম্পাদক হতে পারবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি ৩৩ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর যুবলীগ এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দীর্ঘ এ সময় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকেছি। দলকে সংগঠিত করতে কাজ করেছি। নেতাকর্মীদের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়িয়েছি। এখন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ দিলে জেলা আওয়ামী লীগকে সাজাতে চাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৬ আসনের এমপি মো. আখতারুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে এ পর্যন্ত এসেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। সারাজীবন সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। আমি চাই সম্মেলনে একটি সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব আসুক। যে মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য ও তদবির বাণিজ্য করবে না। এসব বিবেচনায় যদি নেতারা মনে করেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সাধারণ সম্পাদক বানান তাহলে আমি নির্বাচিত হবো। দল, দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই নতুন প্রজন্ম যারা প্রতিষ্ঠিত এবং সৎ তারাই নেতৃত্বে আসুক। তারা যেন দুর্নীতি তদবির বাণিজ্য মনোনয়ন বাণিজ্য কমিটি বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে থাকে।
তেরখাদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, যোগ্য ও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হলে আমি অবশ্যই সাধারণ সম্পাদক পদের দাবি রাখি। সর্বোপরি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন সেটাই আমি মাথা পেতে নেব।
নিজের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খানও।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে ছাত্রলীগ করি। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। ২০১৫ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। তিনবার বটিয়াঘাটা উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছি। খুলনায় কেউ নেই পরপর তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে তাতে আমি মনে করি সৎ, যোগ্য ও স্বচ্ছ মানুষ প্রয়োজন। সেই হিসেবে আমি সাধারণ সম্পাদক পরে বেশি দাবিদার। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের বেশি জনপ্রতিনিধি। একটা লোকও বলতে পারবে না গর্হিত কোনো কাজ করেছি। আশা করি এসব দিক দল বিবেচনা করবে,’ যোগ করেন এই আওয়াম লীগ নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এমআরএম/এমএ