গতবারের মতো এবারও কি শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামই ঘোষণা করবে হাইকমান্ড, নাকি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের নেতা নির্বাচিত করতে পারবেন তা নিয়ে শেষ মুহূর্তেও চলছে গুঞ্জন। এছাড়া দেশে নতুন নেতৃত্বের যে ধারা সূচিত হচ্ছে তার হাওয়া রাজশাহীর উত্তপ্ত রাজনীতিকেও শীতল করবে কি-না তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোটই মূল সমাধান। নেতা নির্বাচন করা উচিত দলীয় কাউন্সিলরদের ব্যালটের রায়ের মাধ্যমেই। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত না হলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে আজও। আর গতবারের সম্মেলনে এই কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক পেতে আগ্রহী প্রার্থীর তালিকায় ছিলেন এক ডজন নেতা। কিন্তু একটানা সরকারে থাকা দলটির জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশার ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়েছে, তৈরি হয়েছে নতুন নতুন নেতা। তাই এবারের কমিটির জন্য শীর্ষ দুই পদে প্রার্থীদের তালিকাও বেশ লম্বা। এই তালিকা লম্বা হতে হতে প্রায় দুই ডজনে গিয়ে ঠেকেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন দলটির জেলা সম্মেলনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যাশীদের তালিকা বাড়বে।
তৃণমূল কর্মী ও কাউন্সিলরদের সুদৃষ্টি পেতে নিজেদের নানা ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা তুলে ধরছেন নেতারা। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছে হাইকমান্ডের সঙ্গেও।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিনশ’ কাউন্সিলর। এর মধ্যে জেলার নেতা রয়েছেন ৬৪ জন। বাকিরা উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তারা সবাই চান ব্যালটেই নির্বাচিত হোক রাজশাহী জেলার ‘নৌকার মাঝি’।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ও সাংগঠনিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহী জেলা কমিটি তার একটি ক্ষুদ্র অংশ। বিগত দিনে দলের জন্য যাদের ত্যাগ রয়েছে, বিপদে-আপদে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যাদের পাশে পেয়েছে, সর্বোপরি যারা জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন, এমন নেতারাই নেতৃত্বে আসবেন। নেতা হতে হবে কর্মীবান্ধব। যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে শক্ত হাতে দলের হাল ধরে রাখতে পারবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকে জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেবেন তাকে নিয়েই আমরা দলকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবো।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে এবার নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের চেয়েও বেশি আগ্রহ। এছাড়া শীর্ষ পদ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যেও উত্তেজনা কাজ করছে। তাই এবার কাউন্সিলরদের ব্যালটে অন্তত দু’টি শীর্ষ পদের (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) ফয়সালা হওয়া উচিত।
রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করছি। জেলা আওয়ামী লীগের অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। তবে নেতৃত্ব নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনেক বেশি সুসংগঠিত। তাই এবারের সম্মেলনে কর্মীবান্ধব নেতারাই পদ পাবেন বলে আশা করি।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, গতবারের চেয়ে এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমান সভাপতি রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, বর্তমান জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল ইসলাম রায়হান, জিন্নাতুন নেছা তালুকদার, কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, জেলার বর্তমান সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল খানসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন জেলা সভাপতির পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের তালিকায়।
অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, আহসানুল হক মাসুদ, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মর্জিনা পারভীনসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরেই।
তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ পদে চমক হিসেবে এবার নতুন মুখ আসার সম্ভাবনাই বেশি। গত পাঁচ বছরে নানা বিতর্কের শীর্ষে থাকা বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর কপাল পুড়তে পারে বলেই ধরে নিচ্ছেন অনেকে। আর এমনটি হলে তৃণমূলের নেতা হিসেবে পরিচিত দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে নতুন কারও ভাগ্যের শিকে ছিড়তে পারে। সেটি হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এবার নতুন মুখই পাবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।
রাজশাহী আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। এরই মধ্যে মঞ্চ তৈরিসহ যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সড়কে শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য তোরণ। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা মেরিনা জাহান, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক, প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান। বক্তব্য রাখবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহীর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আনজুম আদিবা মিতা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএস/একে