বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে গত তিন মাসে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ফল আসেনি, বেশি দূর অগ্রগতি নেই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের।
অন্যদিকে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ থাকলেও তারা আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, ভারতও সমঝোতায় গেছে। ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। তাদের ওপর যে শুল্ক ছিল, সেটা অর্ধেক থেকেও কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টাকে অন্যান্য দেশের মতো করে ভাবেনি সরকার। শুধু প্রধান উপদেষ্টা যে চিঠি দিয়েছেন, সেটার বাইরে খুব বেশি একটা অগ্রগতি নেই। ফলে চিঠির প্রতি সম্মান দেখিয়ে দুই শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন যেভাবেই হোক একটা বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আর দরকষাকষির সময় নেই।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের ফলে তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর আবারও ধাক্কা লাগবে। এর ফলে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বলতার সুযোগ নেবে। বর্তমানে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার মতো অবস্থানে নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ২০ থেকে ২৫ শতাংশের নিচে হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। সে আলোকেই বাংলাদেশকে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে। গত তিন মাসে আমরা কিছু করতে পারিনি। যত দ্রুত এটা করতে পারব, তত আমরা এগিয়ে যাব। এজন্য সরকারকে দরকষাকষি করতে হবে। নেগোসিয়েশন টিমে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি থাকা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকার বলছে, আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিঠিটা কার্যকর হবে। অর্থাৎ আরও এক মাস সময় পেয়েছে সরকার। এর অর্থ হলো, দরকষাকষি করে কিছু একটা করা যাবে। এখন এটা ‘ওয়ান টু ওয়ান’ নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। আমরা সেটার জন্য চেষ্টা করছি। সেটার প্রেক্ষিতে সরকার অন্যান্য পদক্ষেপ নেবে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৭ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেন। আরোপিত নতুন শুল্ক আগস্ট মাস থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন মাসে আমরা বেশি অগ্রগতি করতে পারিনি। শুল্ক কমানোর জন্য আমাদের যে প্রস্তাবগুলো ছিল, আমরা কিছু পণ্য চিহ্নিত করেছি এবং অশুল্ক বাধা কীভাবে দূর করব, সে বিষয়ও ছিল। প্রধান উপদেষ্টা যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে এ বিষয়গুলো ছিল। ওই চিঠির বাইরে আমরা খুব বেশি একটা অগ্রগতি করতে পারিনি। আলোচনা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ইউএসটিআর-এর সঙ্গে কথা বলেছেন। টিকফা ব্যবহারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের প্রস্তাবগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি যে, বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নেবে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দূর হতে পারে। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে গত তিন মাসে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, এগুলোর কোনো ফল আসেনি। বাংলাদেশের যে চিঠি ছিল, সেটাকেই সম্মান দেখিয়ে দুই শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মাহফুজ কবীর বলেন, এই ট্যারিফের প্রভাবে যেসব পণ্য আমরা রপ্তানি করি, সেখানে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমাদের যে প্রতিযোগী দেশ আছে তারা ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গুছিয়ে নিয়েছে। চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ, তারপরও তারা আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, ভারতও সমঝোতায় গেছে। ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। তাদের ওপর যে শুল্ক ছিল, সেটা অর্ধেক থেকেও কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সবাই সাফল্য লাভ করলেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি কেন? কারণ আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমরা বিষয়টাকে অন্যান্যদের মতো না ভেবে বিষয়টাকে সবাই মিলে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি দেশ নিজেদের কৌশলে এগিয়েছে। এখন যে ১৪টি দেশ বাকি আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ বাদে সব দেশই নিজেরা প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশকেও সেভাবে অগ্রসর হতে হবে, বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিতে হবে।
মাহফুজ কবীর বলেন, আমাদের নতুন পদ্ধতিতে যেতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কার করে বলতে হবে কত পরিমাণে শুল্ক কমাতে হবে। মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না, চুক্তি করতে হবে। আমরা যদি এসআরও ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারতাম, তাহলে তাদের দেখাতে পারতাম যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের একটা বাজটে হলো, তার আগেই এ ধরনের কর্মকৌশলের প্রয়োজন ছিল। সে কাজটা আমরা করিনি। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। এখন আমাদের নেগোসিয়েশন জোরালো করতে হবে। যেভাবেই হোক একটা বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এখন দরকষাকষির সময় নেই, গত তিন মাসে আমরা কিছু করতে পারিনি। যত দ্রুত এটা করতে পারব তত আমরা এগিয়ে যাব। আগে আমরা চিন্তা করতাম যে উইন উইনে যাব, কিন্তু এখন আমরা ডেঞ্জার জোনে চেলে গেছি। সেখান থেকে আমাদের সেভ জোনে আসার চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেসব প্রতিযোগী দেশ আছে, তাদের শুল্কের হার ২০ শতাংশের মতো। ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ, ভারতের ২৬ করা হলেও আরও কমবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য ২০ শতাংশ বা যদি তার কাছাকাছি হয় সেক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকবে দেশ। সে আলোকেই বাংলাদেশকে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে তাদের ওপরই ট্যারিফ বসাবে তারা। তবে এটার ভালোমন্দ দুই দিকই আছে। খারাপের দিকটাই বেশি। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে এগোচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক কোনো চুক্তি নেই। আগেও ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ ট্যারিফ দিয়েই আমাদের তৈরি পোশাক সেখানে যেত। যেখানে অনেক আফ্রিকান রাষ্ট্র তাদের তৈরি পোশাক নিয়ে শূন্য ট্যারিফে প্রবেশ করত। তারপর আমাদের জিএসপি সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার মতো অবস্থানে নেই।
তিনি বলেন, আমাদের যারা প্রতিযোগী আছে তাদের ওপরেও ট্যারিফ বসানো হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এরফলে তাদের বেশি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিটা বেশি হবে কারণ আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ আসে এই তৈরি পোশাক থেকে। যুক্তরাষ্ট্র হলো আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। এরফলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে। এজন্য বাংলাদেশকে জোরালো নেগোসিয়েশন করতে হবে। তারা যেহেতু ইকুয়াল বাণিজ্য চায়। কিন্তু আমার মনে হয় না সেটা আমরা করতে পারব।
আবু আহমেদ আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ২৫ শতাংশের নিচে হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। এখন আমাদের ওপর উচ্চ শুল্ক বসিয়ে অন্যায় করা হচ্ছে। আমরা যেহেতু তাদের পণ্য সস্তায় দিতে পারছি, এতে তাদের ভোক্তারা উপকৃত হচ্ছে। এখন সরকারকে কঠোর নেগোসিয়েশন করতে হবে। এতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ জরুরি। এজন্য নেগোসিয়েশন টিমে ব্যাবসায়ী প্রতিনিধি থাকা উচিত।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেএমইএ) সাবেক পরিচালক শোভন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের ফলে তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর আবারও ধাক্কা লাগবে। এর ফলে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বলতার সুযোগ নেবে। এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি ও পরে ১০ শতাংশ রেখে বাকিটা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলে সে সময়ও ক্রেতারা সুযোগ নিয়েছিল। আগের ১৫ শতাংশ ও নতুন আরোপ করা ৩৫ শতাংশসহ এখন মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। এতে তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন আরেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই পদক্ষেপের ফলে ভিয়েতনাম সুবিধা পেলো। নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশেরও সেটা প্রয়োজন ছিল। ভিয়েতনাম এগিয়ে গেল। ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সুবিধা পাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। তবে নোগেশিয়েশনের এখনো সময় আছে, দেখা যাক কী হয়!
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি আগামীকাল ৯ জুলাই ইউএসটিআর’র সঙ্গে আলাপ করবেন। কালকের পর আমরা বুঝতে পারব। আমরা আশা করি, যাই হোক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা অন্যান্য পদক্ষেপ নেব। এখন বৈঠকটা মোটামুটি ইতিবাচক।
চিঠি ইতোমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এইটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সে জন্যই তো ইউএসটিআর’র সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল না।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, গতকালকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করে চিঠিটা দিয়েছে সেটা আমরা আশা করিনি। কারণ আমাদের এই সপ্তাহে যে ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ তারিখের মিটিংগুলো নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যেই এই চিঠিটা সম্পর্কে আমরা জানতাম না। তারা অগাস্ট পর্যন্ত এই চিঠির কার্যকারিতা দিয়েছে, অগাস্টের ১ তারিখ থেকে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এক মাস সময় দিল এবং খসড়া এখন পাঠাল। অর্থ হলো, নেগসিয়েশন করে কিছু একটা করা যাবে। আমরা সেটার জন্য চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সামনে এক মাস রেখে ডকুমেন্ট হ্যান্ডওভার করা হয়েছে এবং নেগোসিয়েশনের ডেট দেওয়া হয়েছে, যেটা তাদের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে। তারমানে নেগোসিয়েশনের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা নেগোসিয়েশনে যুক্ত হচ্ছি। আমরা কথা বলছি। আমাদের উপদেষ্টা সেখানে আছেন। আমি আজকে যাচ্ছি সন্ধ্যায়। আমরা কিছু একটা ফলাফল পাব না, এরকম আশা করে তো আর সেখানে যাচ্ছি না, আশা করি কিছু একটা ফলাফল আমরা পাব আলোচনা করে।
নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে আমাদের আমদানি-রপ্তানির ওপর চাপ পড়বে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, চাপ হবে, সেটা তো সবাই বোঝে এবং সেটা যাতে না হয়, সে জন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি ভালো কিছুই পাব।
নেগোশিয়েশনে যুক্তিগুলো কী কী থাকবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, মোটাদাগে আমাদের যুক্তিগুলো থাকবে প্রথমত শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত আমাদের ট্রেড রিলেটেড আরও যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলোতে আমরা যেন অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে না পড়ি। মোদ্দা কথা হলো যে, বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রধান বিবেচ্য বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের যে এক্সিস্টিং বাণিজ্য আছে, সেই বাণিজ্য রক্ষা করা। আর আমাদের কাছে তারা কিছু চেয়েছে, সেটা হলো শুল্ক কমানো। পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি এগুলো যেন আমরা কমাই। সে ধরনের প্রস্তাব তারা করেছে। আমরা সেটা এনবিআরের সঙ্গে কনসালটেশন করার পরে, সরকারের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কনসাল্ট করে সে ব্যাপারেও আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, এই চিঠিতে যা যা উল্লেখ করেছে, মানে আজকের যে ডকুমেন্ট পেয়েছি, তাতে যা ছাড় চেয়েছে তারা, সেগুলো আমরা অবশ্য আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং সেগুলোর উপরে এমনিতেও ডিউটি খুব কম। যেমন গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট, অন্যান্য মেশিনারি—এগুলোর ওপর এমনিতেই ডিউটি রেট খুব কম। ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ইউএস ট্রেন্ডটা বাংলাদেশে বাড়ানো দরকার। সেটা না বাড়ালে তো আসলে তারা আমাদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। কাজেই আলাপ-আলোচনা করে কিছু ছাড় আমাদের দিতে সম্মত হতেই হবে।
৭ জুলাই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে গত এপ্রিলে স্থগিত করা শুল্ক ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা চিঠিতে ট্রাম্প জানান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
গত ২৬ জুন ওয়াশিংটনে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি সভা হয়। ওই সভায় যোগ দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি জানিয়েছিলেন, শুল্ক আরোপ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অটুট রাখা নিয়ে সংবেদনশীল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর শুল্ক শূন্যের কাছাকাছি। হয় শূন্য, নয়তো শূন্যের কাছাকাছি। এরপরও তারা বেশকিছু প্রডাক্ট লাইনে শুল্ক সুবিধা চায়। এ ছাড়া তারা শুল্ক আরোপ করবে। সেক্ষেত্রে আমরা যেন প্রতিযোগী হিসেবে থাকতে পারি, সে বিষয়ে তারা সংবেদনশীল। আশা করা যায়, ইতিবাচক একটা কিছু হতে পারে।
উল্লেখ, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকপণ্য রপ্তানিতে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ হারে শুল্ক নিয়েও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় বেশি ছিল। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থমূল্য বিবেচনায় দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।
জিসিজি/এমজেএফ