ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

বিএনপিতে পদ নিয়ে বিভেদ

মান্নান মারুফ, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৬
বিএনপিতে পদ নিয়ে বিভেদ

ঢাকা: পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বিএনপিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস কেন্দ্র থেকে জেলা পযর্ন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ঝুলিয়ে রাখার কারণেও নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

যা ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলেও।

ফলে নেতাদের ওপর কর্মীরা বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। বাড়ছে নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস। আর অবিশ্বাসের দোলাচলে দলের সর্বস্তরে ক্রমেই ‘অচলাবস্থা স্থায়ী’ হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিপদের সময় সিনিয়র নেতাদের পাশে না পেয়েও তারা মাঠে ছিলেন,  হয়েছেন গ্রেফতার। জেল-জুলম সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তারা পাননি কোনো পদ। আবার আন্দোলন সংকটে যারা দলের নেতাদের পাশে থাকেননি, তারাই পাচ্ছেন পদ। এ কারণেই সিনিয়র অনেক নেতার ওপর বিশ্বাস হারিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। টাকার বিনিময়ে অনেককেই পদ দেওয়া হচ্ছে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এতে অবিশ্বাসের মাত্রা আরও বাড়ছে।

অন্যদিকে কে কার লোক প্রমাণ করতে না পারলেও পদবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে কর্মীদের মাঝে। বিভিন্ন গ্রুপে অংশ নিয়ে অনেকেই বিভক্ত হয়ে পদ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামছেন। এ বিভক্তি ও বিভেদ এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে।

কেন্দ্রীয় বিএনপিতে সিনিয়র নেতারা তাদের অনুসারীদের কমিটিতে জায়গা পেতে মহড়া চালাচ্ছেন চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কর্যালয়ে। কোন নেতা কতোবার গুলশানে গিয়ে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করছেন এ নিয়েও উচ্চবাচ্য কথা হচ্ছে দলের ভেতরে।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদল কৃষক দল, শ্রমিকদল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সারাদেশে এখনও কমিটি নেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুসারীদের জায়গা করে দিতে ব্যস্ত প্রতিযোগিতা চালাচ্ছেন অনেক সিনিয়র নেতা। এ অশুভ তৎপরতার কারণে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষণা।

পদ-পদবী নিয়ে দলে বিভেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। সবাই পদ পাবেন না। কিন্তু দলের জন্য সবাই সময় দেয়। কষ্ট করে। তাই পদ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। তবে এটাকে আমরা কখনই বিভেদ মনে করিনা। দলীয় যেকোনো কর্মসূচির ডাক দিলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কর্মীরা।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কমিটি গঠনে সময়ক্ষেপণের কারণে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। নানা গুজবে নিজেদের মধ্যে রূপ নিচ্ছে ক্ষোভ।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দলটির নিবার্হী কমিটি ছাড়াও কৃষকদল, যুবদল, ঢাকা মহানগর কমিটির পূর্ণাঙ্গ রুপ পাচ্ছে না দীর্ঘদিন। এ সংগঠনগুলো এখন দলীয় কার্যালয় ও নেতাকেন্দ্রীকে পরিণত হয়েছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি ঝুলে আছে তাও প্রায় কয়েক মাস। দলটির মূল শক্তি ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। ঢাকা মহনগর বিএনপির একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও নগরীর কোনো থানায় কমিটি নেই। প্রায় একযুগ আগের নেতারা এখনও দায়সারাভাবে দলের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। কোথাও আহ্বায়ক কমিটি আবার কোথাও ভেঙ্গে দেওয়া কমিটির নেতাদের দিয়েই দেশব্যাপী চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, পদের প্রতিযোগিতার কারণে সিনিয়রদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, এটা বিশ্বাস করি না। দলের নেতাদের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে। বিএনপি বড় দল, এদের সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব না। এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা তাড়াতাড়ি আসলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬
এমএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।