বৃহস্পতিবার (০১ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণের জন্য এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
সরকার বাজেটকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (সরকার) ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ খাতে কী পরিমাণ বরাদ্ধ দেয় তা দেখতে চায় বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (০১ জুন) দুপুর দেড়টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব জানালেন ‘এ বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না’।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে বাজেটকে ব্যবহার করছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের অবস্থা ভালো না। সেগুলোর জন্য আমরা দেখতে চাই, ওইসব খাতে কীরকম বরাদ্ধ আসছে। এখন পর্যন্ত ওইসব খাতের অবস্থা ভালো নয়।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই বাজেটটি জনগনের কল্যাণে খুব একটা কিছু করতে পারবে না। তাছাড়া সরকার জনগনের ভোটের নির্বাচিত হয়নি। সতুরাং তাদের বাজেট উপস্থাপনার বৈধ্যতা নিয়েও জনগণের মধ্যে প্রশ্ন আছে।
ফখরুল বলেন, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সরকারকে একটা বাজেট দিতে হয়। পার্থক্যটা এখানে যে, এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। এখানে সরকারের লেজিটেমিসির প্রশ্ন এসে যায়। সেকারণে সমস্ত সংকটের মূলে কিন্ত এই যে, এই সরকারের বৈধ্যতা নেই। বাজেট যে তারা দিচ্ছে, সেটারও কোনো জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা তাদের নেই। সংসদে যে আলোচনাগুলো হবে, তারও জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে হবে না।
বাজেটের আলোচনা-সমালোচনা, জনগনের কল্যাণে কতটুকু হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই বাজেটের বিশাল অবয়বকে হাইলি অ্যামবিসাছ হিসেবে অবিহিত করছেন।
এবার বলা হচ্ছে যে, ঝুঁকি নিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন যে, শেষ বাজেট ঝুঁকি নিয়ে দিচ্ছেন। ভাল কথা। যারা বাজেট দিচ্ছে, তাদের সেই বৈধ্যতা আছে কিনা। বৈধ্যতা নেই বলেই আজকে আর্থিক ক্ষেত্রে যত সংকট সৃষ্টি হচ্ছে- বলেন মির্জা ফখরুল।
অতীতের বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ব্যাংকিং সিষ্টেম, শেয়ার মার্কেট এবং এডিবি‘র(বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) যে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, সেটাও কিন্তু চূড়ান্তভাবে হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে আমরা পত্রিকায় দেখেছি, গতবছরের বাজেটের ৫৫ ভাগ থেকে ৬০ ভাগ এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তাহলে এই বড়ো বাজেট দেয়ার যুক্তিটা কী থাকতে পারে?
তিনি বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্যটা কী? লক্ষ্যটা এমন হতো, জনগনের কল্যানের জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য তাহলে একটা কথা ছিল। আমরা দেখছি যে, ভ্যাট’র মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে এবং অনুৎপাদক খাতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
তিনি বরেন, পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে দুর্নীতি চরম পর্যায় চলে গেছে এবং কোনো জবাবদিহিতা নেই, কোনো টেন্ডার হয় না- এই বিষয়গুলো রয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করি, আমাদের দেশের আর্থিক যে নিয়ন্ত্রণ বা আর্থিক যে ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই বাজেটে।
বাজেট পেশের ১ ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটায় বাংলানিউজের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, সেহেতু তাদের সব কর্মাকণ্ডের বৈধতার একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই হিসেবে বাজেটের বৈধতা নিয়েও একটা প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেছে।
বাজেটে জনগণের উপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আয়ের মূল উৎস হচ্ছে কর। কিন্তু জনগণের কাছ থেকে কর গ্রহণের নৈতিক ভিত্তি কী এই অনির্বাচিত সরকারের আছে?
বিশাল কলেবরের এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভভ হবে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এজেড/বিএস