তারা বলছেন, দেশবিরোধী হিসেবে যারা ইতোপূর্বে কাজ করেছেন বা বর্তমানে করছেন তাদের সবারই কঠিন সাজা হওয়া উচিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন এই আজহার।
স্থানীয় বয়বৃদ্ধদের মতে, রাজনীতি করে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন আজহার। ফলে তার বিরুদ্ধে কখনও কেউ কিছু বলেননি; এছাড়া নিরাপত্তাজনিত বিষয়ও ছিল। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে যখন সাক্ষী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও- তখন অনেকেই ৭১-এ তার কুকীর্তির কথা তুলে ধরলেন।
বদরগঞ্জ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী যেতে মহাসড়কে হাতের ডানে পড়বে ডাক্তার পাড়া। সেখানে রয়েছে আজহারের বাড়ি। তবে কেউ থাকেন না; পরিত্যক্ত। অনেকে তাই যেতে পথে মশকরা করে বলেন, ওটা তো ভুতের বাড়ি, কেউ বলেন, জ্বিন আছে! পাশের বাড়িতে থাকেন আজহারের চাচাতো ভাই সিরাজুল ইসলাম ও তার ছেলেরা। কথা হয় তাদের সঙ্গে।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সিরাজুল বাংলানিউজকে বলেন, দোষ প্রমাণ হয়েছে, এখন বিচার তো কার্যকর করতেই হবে। অনেক সময় নিয়ে মানসম্পন্ন একটা বিচার করেছে, এখানে কিছুই বলার নেই। মেনে নিয়েছি। তবে সরকারকে এটুকু অনুরোধ করবো, আজহারের যে বাড়ি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে তা যেন বাজেয়াপ্ত করা হয়। এটা সরকারের প্রাপ্য।
সিরাজুলের ছেলে রবিউল ও ইমরুল বাংলানিউজকে বলেন, চাচার জন্মস্থান হলেও তিনি ধরা পড়ার বহু আগে থেকেই ঢাকায় রাজনীতি করতেন। এলাকায় খুব একটা আসতেনও না।
তারা বলেন, শুধু আজহার কেন, সব প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীর বাড়ি-ঘর-সম্পদ সরকার তার জিম্মায় নিতে পারে। প্রয়োজনে সেখানে গড়ে তোলা হোক সরকারি প্রতিষ্ঠান।
বাংলার মহান স্বাধীনতার বিরোধিতায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়ে উঠতি বয়সেই আজহার হয়ে উঠেছিলেন রংপুর অঞ্চলের ত্রাস। চার দশকেরও বেশি সময় আগের সেই অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১’র চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ২০১৪ সালে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। তবে সুপ্রিম কোর্টে তিনি আপিল দায়ের করেছেন।
প্রসিকিউশনের আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে আজহারের দণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ রয়েছে।
আজহারুল একাত্তরে ছিলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি। সেসময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে ১৪ শ’র বেশি মানুষ হত্যা, বহু নারীর ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। প্রসিকিউশনের মতে, সংখ্যার দিক থেকে এতো বড় গণহত্যার বিচার এ ট্রাইব্যুনালে আর হয়নি।
তবে রায় শুনেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ছিল এই রাজাকারের। কাঠগড়ায় থাকা এই জামায়াত নেতা দাঁড়িয়ে যান এবং সামনের দিকে হাত উঁচিয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা ফরমায়েশি রায়। আমি নির্দোষ। তবে রায়ের পর স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করেন রংপুরের বীরাঙ্গনা মানসুরা, যাকে অন্য অনেক নারীর মতো ধরে নিয়ে গিয়েছিলো আজহার ও পাকিস্তানি বাহিনী, রংপুর টাউন হলে নিয়ে করা হয়েছিল ধর্ষণ।
আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। বাবার নাম নাজির হোসাইন ও মা রামিসা বেগম। ১৯৬৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে পরের বছর তিনি ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। একাত্তরে বাঙালি যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আজহার তখন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার। বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের তত্ত্বাবধানে এই সশস্ত্র দলটি গড়ে তোলা হয়।
আরও পড়ুন:
ধান ক্ষেতে ঐতিহ্যের মসজিদ!
ও ধান ভানরে...
চাল ভাজা ছাতুর সংসারে ভাবনাহীন ভবিষ্যৎ
জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
আইএ/জেডএম