অবশ্য, খালেদা জিয়া যদি কারাবন্দি থেকেই যান, সেক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হবে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটি মিলে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আভাস দিচ্ছেন তারা।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনই নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনকালীন সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়া, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়া। শর্তগুলোর কোনোটাই এখনো পূরণ হয়নি। এগুলো পূরণ হলেই নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে দলটি। আর সেটা করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলেও মনে করেন তারা।
জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এতোদিন ধরে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের (অবশ্য সম্প্রতি দু’টি দল বেরিয়ে গেছে) নেতৃত্ব দিচ্ছিলো। স্বাধীনতার বিরোধিতা ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াত তাদের জোটে থাকায় এ নিয়ে বিএনপিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে চাপে থাকতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি বিএনপি আবার যোগ দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’। এই জোটে আছে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। এমনকি জোটে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতো ব্যক্তিত্বদেরও দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘প্রবীণ, গ্রহণযোগ্য, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের’ নিয়ে নতুন মেরুকরণ করায় ইতোমধ্যে কূটনীতিকদের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে বিএনপি। সর্বশেষ গত ১৮ অক্টোবর কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, ‘এবার নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে’।
নির্বাচন ঘিরে ঐক্যফ্রন্টের এই সভা-সমাবেশ হলেও বিএনপির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার প্রথমেই রয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। সুতরাং সরকার যদি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে চায়, তাহলে অবশ্যই খালেদাকে মুক্তি দিতে হবে।
এদিকে নির্বাচনে বিএনপি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ভুক্ত হয়ে অংশ নিলে জোটের শরিক দলগুলো কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে, সেটিও এখনো স্পষ্ট নয়। আসন ভাগাভাগির মতো এই বিষয়টিও দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির ওপরই নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা।
সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বিএনপি নেতারা। তারা খালেদা জিয়ার ওপরই সেই বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে চাইছেন। বিএনপি প্রধান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও মেনে নেবেন বলে আশাবাদ দলটির নেতাদের।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ‘২০ দলীয়’ জোটের শরিকদের ৫০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। তবে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। যদিও বিএনপি নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ’২০ দলীয় জোট’র সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু একটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছি, আমরা সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা আশাবাদী, নির্বাচনের আগে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে সরকার। আমরা তাকে নিয়েই সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাত দফা ন্যায্য দাবি। এটা জনগণের দাবি। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের দাবি মানবে। ’ যদি দাবি না মানে সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ‘সেটা সময়ই বলে দিবে, কী করতে হবে। ’
বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হোক, তারপরেই না নির্বাচনী প্রস্তুতি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশই তো নেই। সবার আগে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেত্রী মুক্তি পেলে ও সাত দফা দাবি পূরণ হলে সময়মত সবই হয়ে যাবে। ’
‘কিন্তু সরকারি দল সবসময় বলে আসছে, সেই দাবি মানা সম্ভব নয়’, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুকে দেখতে গিয়ে (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, দুনিয়ার এক সেকেন্ডের ভরসা নেই, ঠিক তেমনই দাবি না মানলে সরকারেরও এক সেকেন্ডের ভরসা নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
টিএম/এইচএ/