ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

নয়াপল্টনে সহিংসতা: অভিযোগের তীর বিএনপির ৬ নেতার দিকে

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
নয়াপল্টনে সহিংসতা: অভিযোগের তীর বিএনপির ৬ নেতার দিকে নয়াপল্টনে সহিংসতা-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলটির ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশ ও মদদে নয়াপল্টনে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, পুলিশের উপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় এই ছয়জনকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার অনুযায়ী বাকি চারজন হুকুমের আসামি হলেন- জাতয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন।  

পুলিশের অভিযোগ, উল্লেখিত ছয়জনের মদদ ও নির্দেশে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পুড়িয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হয়।

ঘটনায় মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলি নোমান, মতিঝিল জোনের এসি মিশু বিশ্বাস, পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবু সিদ্দিকসহ ২৩ পুলিশ সদস্য আহত হন।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি লেন ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে কেউ একজন 'পুলিশকে ধর' বলে চিৎকার দেয়। এরপর কার্যালয়ের ভেতর থেকে লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের উপর হামলা করা হয়। তারা তাৎক্ষণিক এই লাঠিসোটা, ইট পেলো কোথায়? নিশ্চয় এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।

প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ছবি, ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সবাইকেই শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া ওই যুবক পল্টন থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার ও পুলিশের গাড়িতে উঠে লাফানো যুবক শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সদস্য এইচ কে হোসেন।

তিনি বলেন, ঘটনার আগে মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী, নবীউল্লাহ নবীকে বারবার থামতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথা না শুনেই পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। নয়াপল্টনে সহিংসতা-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএর আগে বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে বিস্ফোরক ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, বিশেষ আইনে এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে পল্টন থানায় মামলা (নম্বর-২১, ২২, ২৩) তিনটি দায়ের করে পুলিশ। ২১ নম্বর মামলার বাদী পল্টন থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ুয়া, ২২ নম্বর মামলার বাদী এসআই আল আমিন ও ২৩ নম্বর মামলার বাদী এসআই শাহীন বাদশা। ইতোমধ্যে মামলা তিনটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মামলায় হুকুমের আসামি ছয়জন ছাড়াও বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য সামসুদ্দিন দিদার, দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ অনেক নেতা-নেত্রীকে আসামি করা হয়েছে।

২১ নম্বর মামলায় ১৯২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ নম্বর মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ জনকে এবং ২৩ নম্বর মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়, যার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬ জনকে।

২১ নম্বর মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনী আচরণবিধির নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও বুধবার আফরোজা আব্বাসের নের্তৃত্বে ব্যান্ডপার্টি, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোডাউন করে পল্টন বিএনপি কার্যালয়ে আসে। এরপর নবীউল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নের্তৃত্বে আলাদা মিছিল শোডাউন করে ও মির্জা আব্বাসের নের্তৃত্বে ৮/১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলসহকারে কার্যালয়ের দিকে আসে।

তারা নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়ক বন্ধ করে মিছিল, শোডাউনের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ তৈরি ও যানচলাচল বন্ধ করে। তাদের রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি রুহুল কবির রিজভীকেও জানানো হয়।

এরপর দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মির্জা আব্বাসের নের্তৃত্বে নেতাকর্মীরা তাদের পার্টি অফিস থেকে লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা করে, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে আক্রমণ করে, ককটেল বিস্ফোরণ করে ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ বাকি দুই মামলার এজহারে উল্লেখ করা হলেও ২২ নম্বর মামলায় উল্লেখ করা হয়, ছয়জন হুকুমের আসামিসহ পার্টি অফিসে উপস্থিত অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ, নির্দেশ ও অর্থায়নে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও দেশে অস্থিতিশীল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে আক্রমণ করে, সরকারি কাজে বাধা দেয়, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল দিয়ে পুলিশের উপর আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। পুলিশের যানবাহনে আগুন ও পুড়িয়ে দিয়ে পুলিশের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২৩ নম্বর মামলায় উল্লেখ করা হয়, তারা ওই ছয় নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ ও মদদে পলাতক এজহারনামীয় আসামিসহ আরও অনেককে নিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল, দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার অসৎ ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটানো হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে একটি ইস্যু তৈরির জন্য এ ধরনের নগ্ন ও পৈচাশিক হামলা চালানো হয়েছে। এটি শুধু পুলিশের ওপর হামলা না, বড় ধরনের একটি হামলার পূর্বপরিকল্পনা মনে হয়েছে। যারা অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করেছে তাদের আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা সবাই বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

ঘটনা পর্যালোচনা করে ইতোমধ্যে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্যই জড়িতদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।