ঢাকা: আসন্ন বাজেটে জনগণের অর্থের সর্বোৎকৃষ্ট সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, উন্মুক্ততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ১১ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে সংস্থাটি।
রোববার (৩১ মে) মে এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় বাজেট রাষ্ট্র ও সরকারের নীতি কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অপরিহার্য। বর্তমান সরকার প্রণীত সকল উল্লেখযোগ্য নীতিমালার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার- যেমনটি করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ভিশন ২০২১, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বা নির্বাচনী অঙ্গীকারে। অন্যদিকে বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, বৈষম্য নিরসণ তথা মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা উপেক্ষা করে উন্নয়ন ও মধ্যম আয়ের দেশের তালিকাভুক্তির স্বপ্ন আপাত দৃষ্টিতে সম্ভব বিবেচিত হলেও স্থায়িত্বের সম্ভাবনার মাপকাঠিতে তা স্বপ্ন বিলাস হিসেবে রূপান্তরিত হবার ঝুঁকি রয়েছে। ”
তিনি আরো বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু দরিদ্র, বৈষম্যের শিকার ও সুবিধা-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে আসন্ন ২০১৫-১৬ জাতীয় বাজেটে অধিকতর প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, নারী-শিশু-যুব উন্নয়ন, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখোমুখি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
টিআইবি’র পক্ষ থেকে উপস্থাপিত সুপারিশসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয় ও স্থানীয় বাজেট নির্ভর সকল প্রকার সরকারি ক্রয়, কর সংগ্রহ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমে একটি সমন্বিত অনলাইন ভিত্তিক পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা; জাতীয় বাজেটের সকল তথ্য স্বপ্রণোদিত, পরিপূর্ণ, ব্যাপক, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা, বিশেষত প্রতিরক্ষাসহ যেকোনো খাতের ক্ষেত্রে এই নীতির ব্যতিক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থী; বাজেট বক্তৃতায় সরকারি ব্যয়, ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা নিশ্চিতের লক্ষে বিশেষ আইন প্রণয়ণের প্রস্তাব থাকা এবং থোক বরাদ্দ নিরুৎসাহিত করে সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি/প্রকল্পে অগ্রাধিকার প্রদান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ নিশ্চিত ও নিয়মিত হালনাগাদ করা; কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা; মানি-লন্ডারিং প্রতিরোধে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করা; জলবায়ু পরিবর্তনে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির সম্মুখীন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিদ্যমান ‘বিশেষ আইন’ রহিত করা এবং রেন্টাল বিদ্যুৎ, কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে অধিক তহবিল এবং প্রণোদনা প্রদান করা।
প্রসঙ্গত, টিআইবি’র উল্লিখিত ১১ দফা সুপারিশ রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের আমন্ত্রণে তাঁর দপ্তরে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
পিআর/এমএ