ঢাকা: ২০১৫-১৬ বাজেটে বিড়ি ও কমদামী সিগারেটে সামান্য করবৃদ্ধি করা হলেও ধোঁয়া বিহীন তামাকে করারোপের কোনো পদক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রজ্ঞা, আত্মা ও এইচডিআরসি নামে তামাক বিরোধী তিনটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, দামী সিগারটে করহার প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবছরে জনগণের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যত দামী সিগারেট আগের বছরের তুলনায় সস্তা হয়ে গেল।
এ বাজেটে কেবল বড় তামাক কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই এবারের বাজেটে।
বাজেট পেশকালে এই প্রথম বারের মতো সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে তার ওপর একটি সম্পূরক শুল্ক ও মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে প্রতি দশ (১০) শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন ভিত্তিমূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ টাকা এবং এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ৪৮ ভাগ।
তারা বলেন, অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় কিন্তু অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন সিগারেটের মূল্যসীমা নির্ধারণ করা বাজার অর্থনীতিতে মোটেও কাম্য নয়। সেজন্য করহার ঠিক রেখে অন্যান্য স্তরের সিগারেটের মূল্যস্তর পুনর্বিন্যাস করেছেন।
মধ্যম স্তরে গতবারের মতোই ৬১ ভাগ সম্পূরক শুল্ক রেখে ৫০-৫৪ টাকার পরিবর্তে ৪০-৬৯ টাকা এবং উচ্চস্তরে সম্পূরক শুল্ক মাত্র ৩ ভাগ বাড়িয়ে মূল্যস্তর ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন।
এরমাধ্যমে বহুজাতিক তামাক কোম্পনিগুলোকে অর্থমন্ত্রীর সুবিধা দেওয়ার প্রয়াসই সুস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। এভাবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোকে বেশি করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হলো। তামাক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে তামাকনিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তামাক বিরোধী ওই তিনটি সংগঠন।
বিড়ির মূল্য (কর সহ) বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ ভাগ, যা বিড়ির অতি অল্প মূল্যের বিবেচনায় একেবারেই পর্যাপ্ত নয়।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, করসহ প্রতি প্যাকেট ফিল্টারবিহীন বিড়ির মূল্য ৬.১৪ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৭.০৬ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি শলাকা বিড়ির মূল্য বাড়বে মাত্র ৩ পয়সা।
এছাড়া, ‘ফিল্টারযুক্ত’ বিড়ির দামও বাড়ানো হয়েছে। এবারের বাজেটে বিড়ি তৈরির পেপারের উপর প্রথমবারের মত ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, এদেশে সবচেয়ে কম কর দেয় তামাক বা সিগারেট শিল্প, অথচ এই শিল্প জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। এজন্য তিনি সিগারেট ব্যবসায়ের আয়কর এবং কর্পোরেট কর দুটোই বৃদ্ধিও প্রস্তাব করেছেন। সিগারেট উৎপাদন ব্যবসা হতে অর্জিত করযোগ্য আয়ের শূন্য-ত্রিশ শতাংশ পর্যন্ত ৪৫ ভাগ কর দিতে হবে।
এছাড়াও কোম্পনির করহারের ক্ষেত্রে পাবলিকলি ট্রেডেড ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড সব সিগারেট কোম্পনিকে ৪৫ ভাগ হারে কর দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণের যুক্তিতে এটি করা হয়েছে, যদিও সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধিতে এর কোনো ভূমিকা থাকবে বলে মনে হয় না।
তথাপি তামাক কোম্পানির আয়কর এবং কর্পোরেট কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে এক্ষেত্রে বিড়ি শিল্পকে দুঃখজনকভাবে ছাড় দেওয়া হলো। জর্দা, গুলসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও এবারের বাজেটে এগুলোর উপরে কর বাড়ানো হয়নি যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় তামাকের স্বাস্থ্যক্ষতির কথা বার বার উল্লেখ করেছেন যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে তামাক বিরোধী আন্দোলনকারীরা আনন্দিত হবেন তখনই যখন তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সত্যিকারের কার্যকর কর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত এসব পদক্ষেপের কথা সরকারের রাজস্ব বোর্ড ভালো করেই জানে। শুধু দরকার এ পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এসএইচ