ঢাকা: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অসম্ভব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেরিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাস্তবভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় সাত শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ হতে পারে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। এ কারণেই অর্থমন্ত্রী এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।
এ বাজেটে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলিয়ে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। অনুদানসহ বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৮শ’ ৫৭ কোটি টাকা। আর অনুদান ব্যতীত সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬শ’ ৫৭ কোটি টাকা।
বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ আট হাজার ৪শ’ ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ এক লাখ ৭৬ হাজার ৩শ’ ৭০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৮শ’ ৭৪ কোটি টাকা। বাকি ২৬ হাজার ১শ’ ৯৯ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে কর ব্যতীত আয় থেকে।
দুই লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৩শ’ ৯৬ কোটি টাকা। আর মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা।
গতবারের মতো এবারও জনপ্রশাসন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৭শ’ ৮১ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।
জনপ্রশাসন খাতের মধ্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ হাজার এক কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা খাতে ১৮ হাজার ৩শ’ ৯৮ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ১৩ হাজার ৬শ’ ৪৪ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ৩৪ হাজার ৩শ’ ৭৮ কোটি টাকা, স্বস্থ্যে ১২ হাজার ৭শ’ ২৫ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ১৬ হাজার ৯শ’ ৫৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৫শ’ ১৩ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে বেতন ও ভাতা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ১শ’ ৫৩ কোটি টাকা। পণ্য ও সেবা ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮শ’ ৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া সুদ পরিশোধ ৩৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা, ভর্তুকি ও প্রণোদনা ও চলতি স্থানান্তর ৬৪ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, থেকে দুই হাজার ২শ’ ৭০ কোটি টাকা এবং শেয়ার ও ইকুইটিতে বিনিয়োগ ১১ হাজার ৯শ’ ৫০ কোটি টাকা।
উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ৫শ’ ৮৭ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের ২৩ দশমিক ৮ শতাংশই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, জনপ্রশাসনে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
বাজেটে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী করদাতাদের তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আগে ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চার লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আগে ছিল চার লাখ টাকা।
কমানো হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার। সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে এ কর হার ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এএসএস/এসএস