ঢাকা: উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ জনশক্তি, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এটি ক্ষমতাসীন সরকারের চলতি মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য মহাজোট সরকারের চলতি মেয়াদের দু’টি বাজেটের তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।
বাজেটের আকার: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও সামাজিক অবকাঠামো ও ভৌত অবকাঠামো খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামাজিক অবকাঠামোতে নতুন অর্থবছরে ৬৯ কোটি ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ রয়েছে ৬৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
ভৌত অবকাঠামোতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৯০ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। সাধারণ সেবা খাতের বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৮২ হাজর ৫৬০ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৫৯ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।
মনবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬০ হাজার ৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য ১৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৫৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ও অন্যান্য ১৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
এডিপি: নতুন অর্থবছরের বাজেটে এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এডিপি বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ১৯ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা।
জ্বালানি অবকাঠামো খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। যা বর্তমানে রয়েছে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।
যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে নতুন অর্থবছরের জন্য ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা ছিল ১৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। যা বর্তমানে ৯ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
জিডিপি: নতুন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকারের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয় ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির আকার বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা।
ঘাটতি: অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের বাইরে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি ধরা হয় ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরের বাজেটে আকারের সঙ্গে বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ।
সম্পদ আহরণ: বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
ঘাটতি পূরণ: বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে নতুন অর্থবছরে বাজেটের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশকি ঋণের এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা বর্তমানে রয়েছে ৬ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।
ঘাটতি অর্থ ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নতুন অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নতুন অর্থবছরের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণের অর্থ অন্যান্য খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা।
উন্নয়ন ব্যয়: নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কাবিখা বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও স্থানান্তরে ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয় ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিপির জন্য রাখা হয় ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত খাতে রাখা হয় ৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। আর ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় কাবিখা ও স্থানান্তর খাতে।
অনুন্নয়ন ব্যয়: প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতের ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।
বৈদেশিক ঋণের সুদের জন্য নতুন বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
আর নতুন বাজেটে অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া খাদ্য খাতের ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে খাদ্য খাতের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৩০৯ কোটি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এএসএস/এসআই