ঢাকা: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটকে প্রান্তজন-বান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।
রোববার (০৭ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বাজেট ২০১৫-১৬ কতটা প্রান্তজন-বান্ধব?’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে ‘সমুন্নয়’।
ড. খালেদ বলেন, প্রত্যাশার যেহেতু সীমা নেই, সে হিসেবে হয়ত হয়নি। কিন্তু এ বাজেট প্রান্তজন-বান্ধব হয়েছে। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয়ের সীমা পর্যন্ত করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, এটা বাস্তবসম্মত। প্রান্তজনদের জন্যই এটা করা হয়েছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ও এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত দুই দশকে সরকারের দারিদ্র্য দূরীকরণে সফলতা থাকলেও বৈষম্য দূর হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার যেহেতু সংবিধান রক্ষার কথা বলে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই তাদের বৈষম্য দূরীকরণে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
ড. ইব্রাহীম খালেদ বলেন, দারিদ্র দূরীকরণে এ সরকারের সফলতা আছে। এতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কমেনি। ১৯৭২ সালে আমাদের দারিদ্র থাকলেও বৈষম্য ছিল না। এখন দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য কমেনি। গত দুই দশকে আমরা দারিদ্র ৪৪ ভাগ থেকে কমিয়ে ২৩ ভাগে নিয়ে এসেছি। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বৈষম্য কমাতে পারিনি।
এ বৈষম্য কমাতে হতদরিদ্রদের টার্গেট করে আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নিতে হবে বলে মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছেন, ঠিকমতো সার্ভিস পাওয়া যায় না। এটা বড় সমস্যা। অর্থমন্ত্রীর ভাষায় যদি বলি, ‘সার্ভিসের জন্য স্পিড মানি’ লাগে। এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। বাজেট তো একটা অংক। এ দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয় না। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হয়। বাজেটে বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগি হয় বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।
খন্দকার ইব্রাহীম বলেন, বাজেটে কয়েকটা স্তম্ভ আছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব বোর্ড। এ বছরে রাজস্বখাত থেকে ৩০ শতাংশ আয় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষমাত্রা এর চেয়ে কম থাকা সত্ত্বেও অর্জিত হয়নি। তাই এ বছরে এ ৩০ শতাংশ করাটা বাস্তবসম্মত হয়েছে বলে মনে হয় না। যদি কোনোভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয়, পুরো বাজেট বাস্তবায়ন হুমকির মুখে পড়বে। আর এবার জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকেও আয় কম হবে, কারণ সেখানে সুদের হার কমেছে।
বাজেটে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটা অর্জনযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারের এ বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য ২.৫০ শতাংশ কর কমানোর উদ্যোগকে শুভ মন্তব্য করে ড. খালেদ বলেন, অনেকে এটাকে ব্যবসাবান্ধব মনে করেন। তবে এটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। পুঁজিবাজার পুরোপুরি সংস্কার হয়নি। ফলে কর ছাড় দিলে ব্যবসায়ে আকৃষ্ট হবে বলে মনে হয় না।
সমুন্নয়ের সমন্বয়ক দিলরুবা ইয়াসমিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বাজেট বিশেষজ্ঞ ড. মাহফুজ কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
এসইউজে/আরএম