এ সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভীত মজবুত ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপরও জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিপিডি’র ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিপিডি জানায়, দেশের সমষ্টিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী রয়েছে। তবে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। গত মৌসুমে আমনের সময় উৎপাদন ভালো হয়নি। ফলে চালের মজুদও কমে হয়েছে। এর কারণে চালের আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে এবং চালের দামও বাড়বে।
দেশে ব্যাংকগুলো বাজে অবস্থায় যাচ্ছে। সুদের হারের সঙ্গে ব্যাংকের ডিপোজিট রেটের প্রার্থক্য বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের বাজেটের বিভিন্ন সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
বিশ্ব বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে তেলের দাম এখনো বেশি জানিয়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই দু’টি জ্বালানি দরিদ্র মানুষ বেশি ব্যবহার করে থাকে। এই দু’টি জ্বালানি থেকে সরকার বেশি মুনাফা করলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি সাশ্রয় হবে না। দাম কমালে গরিব মানুষ লাভবান হবে।
বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা কাটাতে পাঁচটি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা কাটাতে সিপিডির অন্য চারটি সুপারিশ হলো- রপ্তানি ও প্রবাসী আয় খাতকে সুবিধা দিতে স্বল্প মেয়াদে টাকার মূল্যমান কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করতে স্বাধীন আর্থিক খাত সংস্থার কমিশন গঠন।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়নকে নীতিগত সমর্থন করে সিপিডি। তবে সিপিডি মনে করে, ১৫ শতাংশ মূসক হার ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ, এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে।
এছাড়া সিপিডি আরও বলেছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিন্ন ১৫ শতাংশ মূসক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আপাতত তা কমানোর সুযোগ এখন নেই। আগামী ১-২ বছরে মূসক আহরণ বৃদ্ধি পেলে তা ক্রমান্বয়ে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।
সিপিডি জানায়, অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর ভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেখছে। অথচ বয়স্ক ভাতার মতো বিষয়গুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি।
অনুষ্ঠানের সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী বাজেটে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। কারণ নির্বাচনের পূর্বে কখনোই বাজেটে পরিবর্তন আসে না। বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও জানান, প্রতিবছর বড় বাজেট বলে যে কল্পকাহিনী বাজারে ছড়ানো হচ্ছে, তা এক ধরনের আর্থিক ভ্রম। বাজেট বড় বলা হচ্ছে, কিন্তু বড় নয়। কেননা, কর জিডিপি অনুপাত কিংবা ব্যয় জিডিপি অনুপাত আগের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয় না বললেই চলে। তিনি প্রশ্ন করেন, বাজেট কি আমলাদের সংখ্যানির্ভর প্রক্রিয়া, নাকি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া?
বাজেট প্রণয়নের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দেখা যায় না। এটি বাজেট-কাঠামোর মৌলিক সমস্যা বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭ (আপডেট সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা)
এমএন/জিপি/জেডএম