রাজধানীর ব্যবসায়ীরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, এই উচ্চহারে ভ্যাট আদায় ও কর আরোপ করার প্রস্তাবে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। পণ্যের দাম যদি নাও বাড়ে, ৫ হাজার টাকার পণ্যে অতিরিক্ত ৭৫০ টাকা দেওয়া লাগলে কেউ সহজে নিতে পারবে না।
তাদের মতে, এমনিতে দেশে নিম্ন-আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। এর ওপর তাদের যদি সব পণ্যেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, তবে মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। যদিও এর আওতামুক্ত থাকার কথা রয়েছে কেবল শাক-সবজি, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, মসলা জাতীয় পণ্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে কোনো জামা কিনতে যেখানে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো, প্রস্তাবিত বাজেটে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। হঠাৎ তিনগুণের বেশি ভ্যাট কার্যকর সহজ হবে না। কারণ, আয় বেড়েছে কেবল সরকারি চাকরিজীবীর। বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়েনি। এমনিতে তারা ৪ শতাংশই ভ্যাট দিতে চান না। সেখানে ১৫ শতাংশ কিভাবে আদায় যাবে?
সরেজমিন বিভিন্ন সুপারশপ ঘুরে ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের কাছ থেকে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকারি সেবার মান বাড়েনি, অথচ ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে, কর বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও টাকা দিতে হবে। যদি অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর করা হয়, তবে এটা সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আগামী নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চেইন সুপার শপ ‘স্বপ্ন’র শুলশান শাখার ম্যানেজার ছাসিউল কস্টা বাংলানিউজকে বলেন, এই ভ্যাট কার্যকর করা হলে ক্রেতা কমে যাবে সুপার শপে। কারণ, সুপার শপ থেকেই কেবল শতভাগ ভ্যাট আদায় করা হয়। যদি সরকার সাধারণ মার্কেট বা দোকানগুলোতে ভ্যাট পুরোপুরি কার্যকর করে, তবে দেশের মানুষ ব্যাপক ক্ষুব্ধ হতে পারে। যার ফল নির্বাচনে পড়তে পারে। সুপার শপ ‘আলমাস’র গুলশান-১ শাখার ম্যানেজার সৈয়দ মো. কুদরত উল্লাহ বলেন, হঠাৎ এতো ভ্যাট বাড়ানো উচিত হবে না। এতে ক্রেতাদের অভ্যস্ত করা যাবে না। আর যদি বাধ্য করা হয়, তবে তার প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে। আর সুপার শপের ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়বে।
ব্যবসায়ী কিবরিয়া মাহমুদ রাজন বলেন, এক কথায় বলতে গেলে, ‘প্রস্তাবিত বাজেট হয়েছে সরকার ডোবানোর বাজেট। এটা রিভিউ করা উচিত। ’
সুপার শপ স্বপ্নতেই বেশিরভাগ বাজার করেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব। বাংলানিউজকে বলেন, এতো কর আর ভ্যাট আদায় করেও কিন্তু সেবা পাওয়া যায় না। যদি স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সরকারি সেবাগুলো কমমূল্যে মানসম্পন্ন পাওয়া যায়, তবে মানুষ ভ্যাট ও কর দেবে। কিন্তু যদি উচ্চহারে ভ্যাট আর কর আদায় করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পায়, তবে এর ক্ষোভ ঝরে পড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
ইইউডি/এইচএ/