ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

এবার হতে হবে ‘কোভিড বাজেট’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২০
এবার হতে হবে ‘কোভিড বাজেট’

ঢাকা: আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হতে হবে ‘কোভিড বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বাজেট শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা।

মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে অনলাইনে ‘আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আলোচনার সূত্রপাত করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

বিশেষজ্ঞ অভিমত উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব প্রফেসর ড. শামসুল আলম এবং বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনসহ অন্যান্য অর্থনীতিবিদরা।

এছাড়া সুজন নেতাদের মধ্যে সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. সি আর আবরার, সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

সভায় অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের বাজেট হতে হবে কোভিড বাজেট। বাজেটের তিনটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কীভাবে আহরণ করা হবে, সেই সম্পদ বিভিন্ন সেক্টরে কীভাবে বিতরণ করা হবে এবং বাজেট কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সম্পদ আহরণের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, আওতা বাড়াতে হবে। যদিও আমাদের রাজস্ব ব্যয়ের বেশি সুযোগ নেই। এবারের বাজেটে উন্নয়ন বাজেট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেখানে স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া কৃষি, শ্রমঘন খাত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্রশিল্পকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার ৫০ লাখ মানুষকে সোশ্যাল সেফটি নেটের আওতায় এনেছে এটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের এখন সোশ্যাল সেফটি থেকে সোশ্যাল সিকিউরিটির দিকে যেতে হবে। বাজেট বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়ায় নজর দিতে হবে।

মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ বছরের বাজেটের আকার অবশ্যই বাড়াতে হবে, যদিও ব্যয়ের সক্ষমতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ঘাটতি মিটানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের মাত্রা বাড়ানো উচিত হবে না। কারণ এমনিতেই এসব ব্যাংক থেকে সরকার অনেক ঋণ নিয়ে ফেলেছে। সরকার ঘাটতি মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের মাত্রা বাড়াতে পারে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি, বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান এসব থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ক্রয়, জনবল বাড়ানো, ওষুধপত্র ক্রয়ে ব্যয় বাড়াতে হবে। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি, কৃষি ও শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক প্রকল্প বাদ দিয়ে ব্যয় কমানো যেতে পারে। বরাদ্দ করা অর্থ সুষ্ঠুভাবে যাতে ব্যয় হয়, দুর্নীতির অনুপ্রবেশ যাতে না হয় এবং জবাবদিহিতা যাতে নিশ্চিত হয় সেদিকে সরকারকে জোর দিতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাজেট হচ্ছে আয় ও ব্যয়ের হিসাব। বাজেটের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অগ্রাধিকার  চিহ্নিত করা। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা মানবিক জরুরি অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে জীবিকার সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। এই দুটো বিষয়কে বিবেচনা করেই এবার বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের যে দারিদ্র্য বেড়েছে সেটা কমানো, মন্দা হলেও যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, সামজিক সুরক্ষা, কৃষি ও শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকারের প্রথম সারিতে রাখতে হবে। দুঃখজনকভাবে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যয়ের সক্ষমতা নেই। প্রতিবছর বাজেটের টাকা মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত আসে। বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতে আগুন লেগেছে, তাই এ আগুন নিভানোর জন্য আগামী এক বছর কী করা যায় সেটা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বাজেট ব্যবস্থা সম্পূর্ণ না বদলালে কিছু হবে না। বাজেট আলোচনায় জনগণ ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অভিমত ও সুপারিশ প্রতিফলিত করার সুযোগ বর্তমানে নেই। এ ব্যবস্থা না থাকার ফলে আলাপ-আলোচনা করে কখনও সরকারের কোনো প্রস্তাবকে পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। তাই আগে এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সবার মতামত বাজেটে প্রতিফলন করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

ড. শামসুল আলম বলেন, যেভাবেই হোক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেসরকারি খাতের প্রাধান্যে চলে গেছে। এ মহামারি ফলে তাই এটা সামাল দিতে শুরুতে সরকারকে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু সরকার স্বাস্থ্যখাতকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোনো কার্পণ্য করেনি। সরকার চেষ্টাও করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দাঁড় করানোর।

সি আর আবরার বলেন, বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক ফেরত এসেছে, তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি জোর দিতে হবে। তাছাড়া জনগণকে আস্থায় আনার বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার আধিবাসী নারী বিভিন্ন পার্লারে কাজ করতো, মহামারির কারণে সবাই এখন কর্মহীন। সরকার তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা দেব আশা করছি।

তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার জন্য যদি বিশেষ ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে সে এলাকার কোনো কাজে আসবে না। রংপুর দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বাজেটে এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকে অনেক কম। এবারের বাজেটে এ বিষয়টিতেও জোর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
আরকেআর/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।