ঢাকা: বাজেটে দেশীয় শিল্পগুলোকে সুরক্ষা দিতে এবং কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবিত বাজেটে কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এই প্রস্তাব করেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মেগা শিল্পের বিকাশ এবং আমদানি বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার স্বার্থে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ন্যূনতম ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্থাপিত অটোমোবাইল-থ্রি হুইলার এবং ফোর হুইলার উৎপাদনকারী কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে ২০ বছর মেয়াদে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশীয় উৎপাদকরা উৎসাহিত হবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কর অবকাশ সুবিধার প্রস্তাবে নতুন বাজেটে স্থানীয় শিল্প, হাসপাতাল, অটোমোবাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, গৃহস্থালি সরঞ্জাম শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছর কর সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কর অবকাশের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার বাইরে ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ও ক্লিনিক বানালে ১০ বছর পর্যন্ত কোনো কর দিতে হবে না। একই সঙ্গে নতুন অটোমোবাইল শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন শিল্পকে একই সময়ের জন্য কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ঘরের সরঞ্জাম (হোম অ্যাপ্লায়েন্স) যেমন: রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স ও ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছরের জন্য কোনো কর দিতে হবে না।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ২২টি খাত করমুক্তির সুবিধা পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে আরও ছয়টি খাতকে করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো ক্লাউড সার্ভিসেস, সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন, ইলানিং ফ্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশনস, মোবাইল অ্যাপস ও আইটি ফ্রিলেন্সিং।
কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে মানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারকে কোনো আয়কর না দেওয়া। এরপর কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য হারে বার্ষিক মুনাফার ওপর কর দিতে হয়। একে করপোরেট কর বলা হয়।
করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটে মোট আয় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। মোট উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আর মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এছাড়া বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
বাজেটে ভর্তুকি-প্রণোদনা ৩৫ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা
সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে কর কমছে
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত
তৃতীয় লিঙ্গের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ
রূপপুর প্রকল্পে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
বাজেটে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে
যেসব পণ্যের দাম কমছে
দাম বাড়ছে সিগারেটের
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ
৫০০০০ টাকার বেশি বিল ব্যাংকিং চ্যানেলে না নিলে অতিরিক্ত উৎসে কর
স্মার্ট ওয়াচ, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি
২ লাখ টাকার কম সঞ্চয়পত্রে টিআইএন লাগবে না
দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন-সংযোজনে আরও ২ বছর ভ্যাট অব্যাহতি
করোনা টেস্ট কিট, টিকা আমদানি ও উৎপাদনে কর অব্যাহতি
বাজেটে ১০ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা
রড-সিমেন্টসহ কমবে নির্মাণসামগ্রীর দাম
বাজেটে ৬ মেট্রোরেলে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ার প্রত্যাশা
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ