ঢাকা: দেশের অনেক বড় বড় প্রকল্পের টাকা বছর শেষে খরচ হয় না। আর অল্প কিছু টাকার বাঁধের অভাবে বছরের পর বছর ভুগতে হচ্ছে কয়রার মানুষকে—প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
শুক্রবার (৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ছোট ছোট প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো এবং মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু জায়গায় আসলেই সাধারণ মানুষের জন্য টাকা দরকার ছিল। কিন্তু সেখান থেকে টাকা কেটে ফেলা হয়েছে। লাইভলিহুড এমপ্লয়মেন্টের যে প্রোগ্রামগুলো রয়েছে সেগুলোতে বরাদ্দ আগের চেয়ে কমানো হয়েছে। একই ভাবে তৃণমুলের জীবিকা নির্বাহের জন্য যে বরাদ্দ ছিল তা কমানো হয়েছে। এই বরাদ্দের পরিমাণ বেশি না। অল্প টাকা দিলেই অনেক কাজ হয়।
তিনি বলেন, তখনই আমার চোখে লাগবে বেশি যখন আমি দেখবো কয়রার মতো এলাকায় সাধারণ মানুষ ছোট একটা বাঁধের জন্য আন্দোলন করে। অন্য ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা সেটি খরচ করতে পারে না। অথচ কয়রার মানুষ বাঁধটি পাচ্ছে না। অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বৈষম্যের ফলে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। শুধু তাদের রাজনৈতিক ভয়েস নেই বা সংসদে তাদের শক্তিশালী প্রতিনিধি নেই। এ জন্য যে ভুগতে হচ্ছে এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, প্রাধিকার মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাড়তি বরাদ্দ সরকারকে অন্যখাতের অর্থ কাটছাট করতে বাধ্য করেছে। ঠিক একই ভাবে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে এখনই রেলসেতু করার তাড়াহুড়ার দরকার ছিল কিনা সেটিও আমাদের কাছে প্রশ্ন। তবে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার কর্মসংস্থানের চেষ্টা করেছে এবারের বাজেটে। সেখানেও আমাদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। এমন কিছু মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেখানে আসলে এ বছর এতটা বরাদ্দ না রাখলেও হতো। যেমন বিদ্যুৎখাত। বলা হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুৎ রয়েছে। কিন্তু মেগা প্রকল্পে আমরা দেখতে পাচ্ছি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২৫ সালে। সরকারের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে নির্বাচনের আগে মেগা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা।
তিনি বলেন, ব্যবসার এরকম অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সরকারি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমেই সরকার কর্মসংস্থান বা কর্মসৃজনের চেষ্টা করবে। সেই লক্ষ্যে সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অনেকগুলো প্রাধিকার প্রকল্পে আরও বরাদ্দ থাকা দরকার। বিভিন্ন অঞ্চলে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের প্রকল্প রয়েছে। সেগুলো শেষ করার লক্ষ্যে বরাদ্দ দিলে এ বছরই শেষ হতো। ফলে সেখানে শিল্পকারখানা হতো, বিনিয়োগ হতো, কর্মসংস্থান হতো। এ ধরনের অনেক প্রকল্প আমরা পড়ে থাকতে দেখেছি। যথেষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ সেখানে যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
আরও পড়ুন: কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বাজেট পেশ হয়েছে: সিপিডি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২১
এসই/এমজেএফ