ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাজেট

‘বাজেটে কৌশল ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
‘বাজেটে কৌশল ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে’

ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে প্রণীত কৌশল ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শুক্রবার (১০ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ সিপিডির পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে সৃজনশীলতার আরও প্রয়োজন ছিল। এখানে ৬টি চ্যালেঞ্জ দেখিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থায়নের সংস্থান, বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করা, টাকার বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং রিজার্ভ সন্তোষজনক রাখা। সেটা কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটার কোন দিক নির্দেশনার সঠিক চিত্র নেই। শুধু তাই নয় মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টির মধ্যেও দুর্বলতা রয়েছে।

অর্থনীতিতে যদি মূল্যস্ফীতি থাকে তাহলে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে না উল্লেখ করে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমবে? কারণ পৃথিবীর অনেক দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় চলে যাবে। আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহও নেতিবাচক দেখছি, তাহলে কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমবে, এটাই বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে। যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে, দুর্নীতি করে অন্যায়ভাবে অর্থ নিয়ে গেছে, তাদের আবার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এটা চরম অনৈতিক। আমরা বলছি, এ থেকে আসলে কোনো অর্থ আসবে না।

তিনি আরও বলেন, এই ধরণের উদ্যোগ নৈতিকতা পরিপন্থি। যারা সৎ করদাতা তাদের নিরুৎসাহিত করা, নৈতিকভাবে তাদের ডিমোরালাইজড (নীতিভ্রষ্ট) করার একটা প্রচেষ্টা। অন্যদিকে যারা অবৈধ উপায়ে অর্থ-সম্পদ বাইরে নিয়ে যায়, তাদের কিন্তু প্রকারান্তরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

 তিনি বলেন, সরকার রাজস্ব আদায়ে পজিটিভ রয়েছে, ব্যক্তি শ্রেণির আয় বেড়েছে এটা ভালো দিক তবে ঋণ খেলাপীর পরিমানও বাড়ছে। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা যেটা দেওয়া হয়েছে এটা আগের মতোই রয়েছে। জনপ্রশাসন, কৃষি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে, ভর্তুকি আগের বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে এটা ভালো দিক। তবে ভর্তুকির পরিমাণটা বাড়ায় অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল, এটা সুখকর নয়। আমাদের খোলা বাজারের ওএমএস পণ্যে বরাদ্দ কমেছে। এতে করে দরিদ্র মানুষরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর আগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল খুব একটা লাভ হয়নি। দেশের বাইরে যারা টাকা নিয়ে গেছেন তাদেরকে যে সুযোগের কথা বলা হয়েছে এটা নৈতিকতার পরিপন্থী, যারা বাইরে টাকা নিয়ে গেছে তারা টাকা ফেরত আনার জন্য নেয়নি, এতে করে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়, এই সুযোগ নীতি নৈতিকতার সঙ্গে খাপ খায় না। শুধু তাই নয় বাজেটে সৃজনশীলতা এবং সংবেদনশীলতারও অভাব দেখেছি যাদের আয় বেশি তাদের আয় বেড়েছে, সম্পদ কর আগের মতো রয়ে গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এসএমএকে/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।