ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্যারিয়ার

পুলিশে চাকরি পেতে অবৈধ লেনদেন নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
পুলিশে চাকরি পেতে অবৈধ লেনদেন নয়

দুই পদে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদের নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে।

মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন'টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না' এ ধরনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। তাই নিয়োগ দুর্নীতির ব্যপারে বিগত বছরের চেয়ে এবার আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন

সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল পদে কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে?
সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে দেড় হাজার কর্মকর্তা নেওয়া হতে পারে। তবে পদসংখ্যা এখনো নির্ধারিত নয়। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাড়ে আট হাজার পুরুষ এবং দেড় হাজার নারী সদস্য নেওয়া হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো কি কি?
সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) এবং ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল কোনো পদেই আগে আবেদন করতে হবে না। প্রার্থীরা সরাসরি শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে নির্বাচিত হলে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারবেন। মৌখিক পরীক্ষায় যোগ্যদের পরবর্তী বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে যোগ্য প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং নিয়োগ দেওয়া হবে। সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) এবং ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল উভয় পদের পরীক্ষার মানবন্টন এবং ধরন ভিন্ন। এ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত দেওয়া আছে।

বিগত বছরে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ শোনা গেছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত-
চাকরি পাওয়ার জন্য প্রার্থীরা অনেক সময় সুপারিশ এবং ঘুষ দেওয়ার চিন্তা করেন। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগও করতে থাকেন। তখন চাকরিপ্রার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নেয় দালালরা। তারা চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রার্থীদের সাথে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেন। পরবর্তীতে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেলেও ভাবেন হয়তো অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণেই চাকরি পেয়েছেন। তবে এসব বিষয় মাথায় রেখে এবার নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীতে স্বচ্ছ নিয়োগের জন্য কি কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগের চেয়ে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ বিশাল প্রক্রিয়া। সারাদেশে সব জেলায় কয়েক লাখ প্রার্থী কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য বাছাইতে অংশ নেয়। তারা যেন কোনো প্রতারকের খপ্পরে না পরেন সেজন্য স্থানীয়ভাবে প্রচার প্রচারণার চালানো হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা এবার আরো কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এবার প্রথমবারের মতো সরাসরি পুলিশ বাহিনীকে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রার্থীরা যখনই চাকরি দেওয়ার নামে অনৈতিক প্রস্তাব পাবেন, সাথে সাথে আমাদেরকে এ সম্পর্কে জানাতে পারবেন। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি নিয়োগ পাওয়ার পরও কারো বিরুদ্ধে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগগুলো জানতে চাই-
যোগ্য প্রার্থীরা যেন পুলিশে নিয়োগ পান সেজন্য করণীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পুলিশ প্রশাসন। প্রত্যেক জেলায় লিখিত পরীক্ষার সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিনিধি হিসেবে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে একটি টিম কাজ করবেন। তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ফটোকপি, বিতরণ, পরীক্ষা গ্রহণ, কোডিং, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ডিকোডিং এবং টেবুলেশন শিট তৈরির কাজ পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা করবেন।

প্রার্থীরা কিভাবে অভিযোগ জানাবেন?
ফোনে, ইমেইলে বা ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। আইজিপি'স কমপ্লেইন সেলের মোবাইল নম্বর +৮৮০১১৬৯৬৯৩৫৩৫ বা +৮৮০১১৬৯৬৯৩৫৩৬ নম্বরে ফোন করে অবহিত করতে হবে। ইমেইল করা যাবে complain@police.gov.bd ঠিকানায়। অথবা ফেসবুকে পুলিশের অফিসিয়াল ভেরিফাইড পেইজে www.facebook.com/BangladeshPoliceOfficialPage গিয়েও অভিযোগ জানানো যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, ফেসবুকে পুলিশের অফিসিয়াল ভেরিফাইড পেইজ বাদে ভুয়া কোনো পেইজে অভিযোগ জানিয়ে যেন পুণরায় প্রতারিত না হন।

চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি পরামর্শ-
শারীরিক বাছাই পরীক্ষায় টিকতে হলে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্যতা এবং শারীরিক ফিটনেস থাকতে হবে। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে মেধা এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন। যোগ্যতা এবং প্রস্তুতি থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপেই সহজে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে অযথা কেন অবৈধ পন্থা অবলম্বনের চিন্তা করবেন! বিগত বছরে দেখা গেছে, নিয়োগের শূন্য পদের বিপরীতে পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য প্রার্থীও পাওয়া যায় না।

পুলিশে চাকরি পেতে অবৈধ টাকা লেনদেন করবেন না। গুজবে কান না দিয়ে প্রত্যেক ধাপের জন্য নিজের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিন। অনৈতিক প্রস্তাব পেলে তাতে সাড়া না দিয়ে বরং উপরে দেওয়া ঠিকানায় অভিযোগ করুন। প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে নিজ যোগ্যতায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পাওয়া সম্ভব।

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।