ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জোয়ারে দিনে দুবার ডুবছে সুন্দরবন, প্রাণীদের জন্য বানানো হবে টিলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২৩
জোয়ারে দিনে দুবার ডুবছে সুন্দরবন, প্রাণীদের জন্য বানানো হবে টিলা

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ, পূর্ণিমার প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। বনবিভাগ বলছে, এতে যাতে প্রাণীদের কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বানানো হবে ১২টি টিলা।


সেই সঙ্গে বাগেরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিন নম্বর সতর্কতিা সংকেত জারি করা হয়েছে মোংলা বন্দরে।  

গেল পাঁচদিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু জোয়ারে দু’বার করে ডুবছে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা। সুন্দরবনের পাশাপাশি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  

তবে জেলা প্রশাসনের হিসাবে এ সখ্যা অনেক কম। জেলার ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার মোংলা পৌরসভা, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও বাগেরহাট পৌরসভার কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জের বহরবুনিয়া, খাউলিয়া, পুটিখালী, তেলিগাতি, হোগড়লাপাশা, কচুয়ার রাড়িপাড়া, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা, ডেমা, কাড়াপাড়া, মোংলার সুন্দরবন, জয়মনির ঘোল, চিলা, রামপালের হুড়কা, বাসতলী, শরণখোলার সাউথাখালী ও রায়েন্দা ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।  

বেশ কিছু মাছের ঘেরও ডুবে যাওয়ার খবর রয়েছে।

কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকার আতাহার হোসেন বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে বাড়ি-ঘর সব ডুবে গেছে। খুবই খারাপ অবস্থায় আছি আমরা।

বহরবুনিয়া এলাকার সগির গাজী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ইটের রাস্তা তলিয়ে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িতে রান্না-বান্নাও বন্ধ। পানিতে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি আমরা।

এদিকে বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। পানিতে সুন্দরবনের করমজল, জামতলা, হিরনপয়েন্ট, দুবলারচর, আলীবান্দা, আন্ধারমানিকসহ অধিকাংশ এলাকা দিনে দুইবার করে ডুবছে।  

অন্যদিকে জোয়ারে সাগরতীর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ।  

তিনি বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় সাগরে জোয়ারের পানি অনেক বেড়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে জোয়ারে কোথাও তিন ফুট, কোথাও এর কম-বেশি তলিয়ে গেছে। ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি নজরে আসেনি।

বনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, গেল চারদিন ধরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে করমজল। এ এলাকা বনের অন্য অনেক এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু। তার পরও করমজলের রাস্তার ওপরে দেড় ফুট পানি উঠেছে শুক্রবার। বনের ভেতরে তিন-চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বনের কোথাও কোনো প্রাণী ভেসে যাওয়া বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। করমজলে কুমির, কচ্ছপ, হরিণ ও বানরসহ অন্যান্য প্রাণী নিরাপদে রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, জোয়ারের কারণে বনের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেলেও সুন্দরবনের জীবজন্তুর তেমন কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রকৃতিগতভাবেই সুন্দরবনের বড় এলাকা জোয়ারে কিছু প্লাবিত হয়। এখানকার বন্যপ্রাণীগুলো এ প্রকৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত।  

অতি উঁচু জোয়ারে বনের মধ্যে পানি বাড়ায় বন্যপ্রাণীদের কিছু সমস্যা হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না বলেই ধারণা তার।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বনের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে বনে পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীগুলো টিলায় আশ্রয় নিতে পারে। পুরো সুন্দরবনে এ ধরনের ১২টি টিলা তৈরি করা হবে চলতি অর্থ বছরে।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা হারুণ-অর-রশীদ বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিন বৃষ্টি থাকতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, সাগরের নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে পশুর, বলেশ্বর, পানগুছি, ভৈরবসহ জেলার প্রায় সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। পশুর নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং দড়াটানা ও ভৈরবের পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের সময় দুই থেকে তিন ফুটের বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হলেও কোথাও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে নেই। বৃষ্টি কমলে এবং পূর্ণিমা শেষ হলে আগামী তিন-চারদিনের মধ্যেই পানির চাপ কমে আসবে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ বলেন, জেলায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। আমরা তালিকা করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি নাগরিকদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ  সময়:  ১৬২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।