ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সাগর উত্তাল, খালি হাতে তীরে ফিরছেন জেলেরা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
সাগর উত্তাল, খালি হাতে তীরে ফিরছেন জেলেরা

পাথরঘাটা (বরগুনা): ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ২৩ জুলাই মধ্যরাতে শুরু হয়েছে ইলিশ ধরা। দীর্ঘদিন অলস সময় কাটিয়ে অনেক আশা নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য জেলেরা সাগরে গেলেও ফিরে আসতে হচ্ছে খালি হাতে।

কারণ দেশের সাতটি অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসি মৎস্য ঘাটের কয়েকশ জেলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে খালি হাতেই।

ফলে হতাশা বিরাজ করছে জেলে এবং ট্রলার মালিকদের মধ্যে।  

মাছ সেভাবে ধরতে না পারায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি না থাকায় জমেও উঠছে না বিএফডিসি মৎস্য ঘাট এবং মাছের আড়তগুলো।

নিরাপদে আশ্র‍য় নেওয়া এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে আনিচুর রহমান ফোনে জানান, দুদিন আগে ১৪ জন জেলেকে নিয়ে তাদের ট্রলার সাগরে মাছ শিকারের জন্য যায়। কিন্তু সাগরে উত্তাল ঢেউ থাকার কারণে নিদ্রা-ছকিনা নামক স্থানে ট্রলার নোঙর করে রাখা হয়েছে। তার ট্রলার মালিক মো. রসুল মিয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন (সুদে ঋণ) নিয়ে ট্রলারে বাজার করে সাগরে মাছ শিকারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় খালি হাতেই ফিরে আসতে হবে।

সাগর উত্তাল দেখে ঘাটে ফিরে এসেছেন নাসির উদ্দিন নামে এক মাঝি। তিনি জানান, বরফ, তেল ও বাজারসহ প্রায় তিন লাখ টাকার রসদ নিয়ে গত ২৬ জুলাই সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। প্রথমে ঝড়ের খবর পেয়েও লোকসান বিবেচনায় সমুদ্রে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে সাগর উত্তাল হওয়ায় জীবনের মায়ায় এবং ট্রলার মালিকের জাল-দড়ির কথা ভেবে ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে তীরে ফিরেছেন। যতদিন আবহাওয়া অনুকূলে না আসবে, ততদিন উপকূলেই থাকতে হবে। আর এ সময় জেলে ও তাদের পরিবারকেও বাজার করে দিতে হয়। একের পর এক এমন চলতে থাকলে ট্রলারের মালিক এবং জেলেরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।

আল্লাহর দান-১ ট্রলারের মালিক মালিক মো. আবুল হোসেন ফরাজী জানান, তার তিনটি ট্রলার সাগরে রয়েছে। এসব ট্রলারের প্রায় প্রত্যেকটিতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার রসদ রয়েছে। একদিকে ডিজেল ও মুদি মালামালের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ছাড়াই ফিরে আসছে। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া প্রত্যেক জেলের পেছনে অনেক খরচ হয়। এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আড়তদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়েছেন। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় সে টাকা শোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। এমন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে পেশা বদলে ফেলতে পারেন অনেকে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ধার-দেনা করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন জেলেরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই শতাধিক ট্রলার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।  

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়ির মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, আশা করা হচ্ছিল, জেলেরা প্রচুর ইলিশ নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে ট্রলারের মালিক ও জেলেদের। জেলেদের সর্বাধিক সহযোগিতা ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।