ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

দ্রুত বাড়ছে ‘স্টেম’ শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ, পিছিয়ে নারী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৪
দ্রুত বাড়ছে ‘স্টেম’ শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ, পিছিয়ে নারী

ঢাকা: আগামী দশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (এসটিইএম) এই চারটি বিষয়ে কর্মসংস্থান অন্যান্য পেশার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হারে বাড়বে।

ইউএস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান-ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস (বিএলএস) ২০১৯-২০২৯ এর তথ্য অনুযায়ী, এ বিষয়গুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৯ সালের মধ্যে চার শতাংশ হারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশেও তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে এ বিষয়গুলো (স্টেম-এসটিইএম) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরির সুযোগ দ্রুত বাড়লেও এসব ক্ষেত্রে দেশের নারীদের প্রবেশগম্যতা পুরুষের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে স্টেম-(এসটিইএম) ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৪ শতাংশ, যা জেন্ডার বৈষম্যের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যকেও বিশেষভাবে নির্দেশ করে। এটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এক্ষেত্রে চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান। এগুলো হচ্ছে: ছেলে-মেয়ে বৈষম্যগত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশার চাপ, এসব বিষয় থেকে পাস করা নারীদের সামনে দেশে রোল মডেল হিসেবে তেমন বড় কোনো দৃষ্টান্ত না থাকা, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে জেন্ডারভিত্তিক নিয়োগ নীতি না থাকা কিংবা কিছু প্রতিষ্ঠানে নীতিমালা থাকলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করা এবং নারীদের জন্য অফিসে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ঘাটতি ও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা।

বুধবার (৮ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ’শিস্টেম বিজনেস কেইস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় পাঁচটি প্রতিস্থানের সমন্বয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: দেশের বিখ্যাত বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স, ১০ মিনিট স্কুল, এ টু আই, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও ডেভলার্ন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৭০০ জনের অধিক অংশগ্রহণকারীদের ওপর জরিপ করে এ তথ্য উঠে আসে। শিস্টেম এর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও অ্যালামনাই সদস্যদের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০টি মূল প্রশ্ন ও নয়টি ফোকাস গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনার মধ্য দিয়ে এ চিত্র উঠে আসে।

এতে আরও বলা হয়, (বিএলএস) ২০১৯-২০২৯ এর তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বিষয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য এই সুযোগ মাত্র ৩.৭ শতাংশ হারে বাড়বে। তবে বিশ্বব্যাপী স্টেম পেশাগুলোতে নারীদের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তারা এখনও কম প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমানে বিশ্বে নারীদের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক পাস প্রায় ২৮ শতাংশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ২২ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ হলেও এ পেশায় নারীরা এক-তৃতীয়াংশেরও কম। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ১.৫ শতাংশ এর কম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ইরমা ভ্যান ডুরেন।

আরও বক্তব্য রাখেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাস এর বিজনেস ডেভলপমেন্ট উপদেষ্টা অসিম রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদা নাজনীন, গ্রামীণ ফোন একাডেমির লিড ফারহানা হোসেন শাম্মু, লাইটক্যাসল পাটনার্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বিজন ইসলাম, একই প্রতিষ্ঠানের বিজনেস কনসালট্যান্ট আমেরা ফাইরুজ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর বিজনেস কনসালট্যান্ট মিনারা খন্দকার।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে; রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে আমরা আমাদের দেশের রূপকল্প ২০৪১ গ্রহণ করি। যা এখন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। এ দৃষ্টিভঙ্গি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে নয়, বরং একটি স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তোলার বিষয়ে প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখা দরকার যে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, তাই নারীরা যদি এ খাতে পিছিয়ে থাকে, তাহলে প্রযুক্তির যুগে এ দেশ কখনোই পুরোপুরি উন্নত হবে না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিস্টেম উদ্যোগটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিল্পপতি এবং নীতি-নির্ধারকদের জন্য একটি রোডম্যাপ হিসাবে কাজ করবে।

নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রদূত ইরমা ভ্যান ডুরেন বলেন, শিস্টেম এমন একটি সুযোগ এবং পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে নারীরা স্টেম ক্ষেত্রে তাদের ক্যারিয়ার অনুসরণ করবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সমানভাবে অবদান রাখবে।

প্রসঙ্গত, শিস্টেম হল একটি বহু-বছরের কনসোর্টিয়াম চালিত কর্মসূচি। যেটির লক্ষ্য: নারীদের বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভিত্তিক চাকরির সুযোগ তৈরি করা ও দক্ষভাবে গড়ে তোলা। এর পাশাপাশি এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ দক্ষতা ও কর্মক্ষেত্র প্রসারে অ্যাডভোকেসি করে থাকে। এ প্রকল্প শুধু নারীদের আগ্রহী করে তুলতে নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণভাবে, তাদের বৃদ্ধির বিকাশ এবং অগ্রগতির সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর নেতৃত্বে কনসোর্টিয়াম এর অন্যান্য অংশীদাররা হলো: তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ টু আই কর্মসূচি, অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল,পলিসি একচেঞ্জ বাংলাদেশ এবং ডেভলার্ন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।