‘স্পোর্টস মিউজিয়াম’ এর সাথে বাঙালীর যেটুকু যা পরিচয় সেটা বিদেশের মাটিতে পা রেখে। নিজেদের ক্রীড়া ঐতিহ্য খুব সমৃদ্ধ তেমন দাবিও তারা করতে পারবেন না।

এমসিসিতে খেলা দেখছেন শচীন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এরকম একটা ছবি যে কোন মাঠের গায়ে লাগানো থাকলে সেই মাঠের মর্যাদা বাড়বে। কিন্তু এমসিজির মিউজিয়ামে শচীনের এই ছবিটা জায়গা পাবে কি না জানি না। কারণ, অস্ট্রেলিয়ানরা তুলনামুলকভাবে একটু রক্ষণশীল। সাদা পোশাকে কিংবা রঙীন পোশাকে আধুনিক ডনকে এমসিজির মাঝখানের বাইশগজ বহুবার দেখেছে। কিন্তু দর্শক শচীনকে এমসিজি শেষ কবে দেখেছে তা বলা কঠিন। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকরাও ঠিকঠাক বলতে পারছেন না। শচীনের উপস্থিতি ভারতকে জিতিয়ে দিয়েছে এমনটা বলার লোকেরও অভাব ছিল না মেলবোর্ন সহ অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ভারতীদের মধ্যে। মাঠে নয়, গ্যালারিতে শচীন ম্যাজিক! কিন্তু যারা মাঠে এসেছিলেন বিরাট কোহলি, এবি ডি-ভিলিয়ার্স ডুয়েলের পাশাপাশি ডেইল স্টেইন- মুহাম্মদ সামি, অশ্বিন-ইমরান তাহির-দের ডুয়েল দেখতে তারা খানিকটা হতাশই হলেন। লড়াইটা কোথায় হলো! ভারতের ৩০৭ রানের চাপ-ই সামলাতে পারলো না সাউথ আফ্রিকা। ‘চোকার’ শব্দটা কেন তাদের গায়ে সেঁটে দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে শন পোলকের যতোই আপত্তি থাকুক, সাউথ আফ্রিকা চাপের মুখে আবার ভেঙে পড়লো! তাতে শনের আরো একটা যুক্তি আছে। ‘হয়তো ভাল-ই হলো। সাউথ আফ্রিকা এখন বাকি ম্যাচগুলো চাপ মুক্ত খেলতে পারবে। ’-বলছিলেন’৯৯ আর ২০০৩ এর বিশ্বকাপ থেকে সাউথ আফ্রিকার মর্মান্তিক বিদায়ের অন্যতম সাক্ষী। এমসিজিতেও তিনি দেখলেন দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো বড় ম্যাচে ভেঙে পড়ার বদঅভ্যাস থেকে বের হতে পারেনি!
উল্টোদিকে শচীন টেন্ডুলকার অন্যরকম এক মিথের সাক্ষী হলেন। একই সঙ্গে মিথ ভাঙারও স্বাক্ষী থাকলেন। ভারত যে ম্যাচটা জিতলো সেই ম্যাচে এমসিজিতে সেঞ্চুরি করলেন শিখর ধাওয়ান। মিথটা এরকম: ধাওয়ান যে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন, সে ম্যাচ ভারত হারে না। হ্যাঁ, এমসিজি-তেও হারলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যার সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি আছে, সেই ভদ্রলোকের সেঞ্চুরিতে ভারত বেশির ভাগ ম্যাচই জিতেছে, সেটাকেও এক সময় মানতে চাইতেন না অনেকে। কারণ শচীনের কাছে সব সময়ই তার ভক্তদের প্রত্যাশাটা একটু বেশি ছিল। শুধু সেঞ্চুরি করলে হতো না। ম্যাচও জেতাতে হতো তাকে। আর প্রতিপক্ষ ভাবত শচীনের উইকেটটা তুলে নেয়া মানে ম্যাচটা পকেটে পুরে ফেলা। কিন্তু শেখর ধাওয়ানকে প্রত্যাশার সেই চাপ নিতে হচ্ছে না। ধাওয়ানের সেঞ্চুরি, ভারতের জয়। সেটা আরো একবার দেখলেন শচীন। সেই সঙ্গে দেখলেন; নিজে যা পারেননি এবারের ভারতীয় দলটা তা করে দেখালো। বিশ্বকাপে ভারত এরআগে কখনো জিততে পারেনি সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। গত বিশ্বকাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বটে। কিন্তু হেরেছিল সাউথ আফ্রিকার কাছে। বিশ্বকাপ মানে সাউথ আফ্রিকার কাছে হার, এই মিথটাও ভেঙে পড়লো এমসিজিতে! কিন্তু সাউথ আফ্রিকা মানে ‘চোকার’ সেই মিথের কি হলো? সেটা কি আর ব্যাখা করার দরকার পড়ছে?
তবে শন পোলকের কথা ধরে একটা ফুটনোট দিয়ে রাখছি। গত বিশ্বকাপে ভারত হেরেছিল সাউথ আফ্রিকার কাছে। শেষ পর্যন্ত কাপটা অবশ্য ভারত জিতেছিল। অতএব চোকাররাও এখনো স্বপ্ন দেখতেই পারে। ২৯ মার্চ এমসিজিতে যদি সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স কাপ উচিয়ে ধরেন, সেই ছবিটা নিশ্চয়ই মিউজিয়ামে জমা পড়বে।
বাংলাদেশ সময় ১৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে